মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হুপিং কাশির প্রকোপ বাড়ছে, উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগ বেড়েছে, এবং এর মধ্যে অন্যতম হলো হুপিং কাশি বা ‘পারটুসিস’-এর ক্রমবর্ধমান প্রাদুর্ভাব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগের সংক্রমণ বাড়ছে, যা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) -এর প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এই পর্যন্ত ৮,৪৮৫ জন হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এর অর্ধেক। এই পরিসংখ্যান উদ্বেগজনক, যা ইঙ্গিত দেয় রোগটি দ্রুত ছড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে হুপিং কাশির প্রকোপ কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর রোগটি আবার বাড়ছে। এছাড়া, রোগের চক্রাকার প্রবণতাও একটি কারণ। সাধারণত, ২ থেকে ৫ বছর পর পর এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাম ও হুপিং কাশির মতো প্রতিরোধযোগ্য রোগ বেড়ে যাওয়ার পেছনে টিকাবিরোধী মনোভাবও একটি কারণ। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের টিকাকরণের হার কমেছে এবং টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়ের সংখ্যা বেড়েছে।
ফিলাডেলফিয়ার চিলড্রেন’স হাসপাতালের একজন চিকিৎসক এরিকা হেইস বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকাবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। আমরা যেমনটা আশা করেছিলাম, পরিস্থিতি তত দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে না। টিকাকরণের হার ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে গেলে, হার্ড ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে যায়।”
হুপিং কাশি সাধারণত বছরের এই সময়ে এবং শরৎকালে বাড়ে। এই রোগ হাঁচি, কাশি বা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এর উপসর্গ সাধারণ ঠান্ডার মতোই, তবে কাশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। কাশির সময় একটি শব্দ হয়, যা ‘হুপিং’ নামে পরিচিত। এই রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে হুপিং কাশিতে আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে কয়েকজন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি, লুইজিয়ানায় দুটি শিশু এবং ওয়াশিংটন রাজ্যে ৫ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
হুপিং কাশির টিকা ডিপথেরিয়া এবং টিটেনাস রোগের বিরুদ্ধেও সুরক্ষা দেয়। শিশুদের ২ মাস, ৪ মাস ও ৬ মাস বয়সে এই টিকা দিতে হয়। এছাড়াও, সিডিসি প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি ১০ বছর পর বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দেয়।
শিশুদের, বিশেষ করে যারা এখনো টিকা পায়নি, তাদের জন্য এই রোগ সবচেয়ে মারাত্মক। তাই গর্ভবতী মায়েদেরও এই টিকা দেওয়া উচিত, যা নবজাতকদের রক্ষা করতে পারে। তবে, অনেক মা গর্ভাবস্থায় এই টিকা নিচ্ছেন না।
চিকিৎসক হেইস জানান, “গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে এই টিকা নেওয়ার প্রবণতা এখনো পর্যন্ত আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।”
পেনসিলভানিয়া রাজ্যে গত বছর এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গিয়েছিল। সেখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র নীল রুহল্যান্ড জানান, ফিলাডেলফিয়া ও পিটসবার্গের মতো জনবহুল এলাকাগুলোতে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে সংক্রমণ বাড়ছে। তবে, রাজ্যের ৯৪.৬ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন শিশুর টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে।
মিশিগান রাজ্যেও পরিস্থিতি প্রায় গত বছরের মতোই হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ড. নাতাশা বাগদাসারিয়ান জানান, এ পর্যন্ত ৫১৬ জন আক্রান্ত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন কাউন্টিতে টিকাকরণের হার ভিন্ন। কিছু স্কুলে এই হার ৩০ শতাংশের নিচে, যা রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দুর্বলতা তৈরি করছে।
ড. বাগদাসারিয়ান বলেন, “আমরা হুপিং কাশির সংখ্যা খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছি। তবে, বর্তমানে আমাদের অনেক সম্পদ হামের বিস্তার রোধে কাজে লাগানো হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগকে আগের চেয়ে কম সম্পদ দিয়ে বর্তমানে অনেক বেশি কাজ করতে হচ্ছে।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস