ভবিষ্যতের রাজা ও রানী: প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের নতুন রাজকীয় জীবনযাত্রা।
প্রিন্স উইলিয়াম একদিন ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ করবেন, তাঁর পাশে থাকবেন স্ত্রী কেট মিডলটন। ভবিষ্যতের রাজা হিসেবে তিনি কেমন হবেন, তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এই রাজকীয় দম্পতির ভবিষ্যৎ জীবন এবং সিংহাসনের পথে তাদের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
উইলিয়াম ও কেটের রাজকীয় জীবনযাত্রার প্রস্তুতি এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে রাজা তৃতীয় চার্লসের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঘোষণার পর। রাজপরিবারের জীবনীকার স্যালি বেডেল স্মিথ বলেন, “তাঁরা হয়তো তাঁদের প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত নিজেদের ভবিষ্যৎ ভূমিকার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।”
প্রিন্স উইলিয়াম বর্তমানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। অন্যদিকে, ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য কিছুকাল জনজীবন থেকে দূরে থাকার পর, কেট মিডলটন ধীরে ধীরে তাঁর আগের রূপে ফিরছেন। জানা গেছে, তিনি কেমোথেরাপি সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে ভালো আছেন।
উইলিয়াম ও কেট যখন রাজা ও রানী হবেন, তখন তাঁরা তাঁদের প্রজন্মের নতুন ভাবনা ও উদ্যম নিয়ে আসবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তাঁরা বর্তমানের মতোই সহানুভূতি, পরিবার-কেন্দ্রিকতা এবং রাজত্বের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবেন। প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক সুস্থতা এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার মতো বিষয়গুলোতে তাঁরা গুরুত্ব দেন। জলবায়ু পরিবর্তন, গৃহহীনতা এবং শিশুদের কল্যাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধানেও তাঁরা কাজ করছেন।
রাজকীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের স্বাভাবিক জীবন দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করেন। ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়েও তাঁরা রাজতন্ত্রকে আধুনিক করার চেষ্টা করছেন। উইলিয়াম ও কেট তাঁদের প্রজন্মের মানসিকতা নিয়ে সমাজের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান।
গত কয়েক বছরে রাজপরিবারে অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি, প্রিন্স ফিলিপ ও রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রয়াণ এবং রাজা ও কেটের অসুস্থতা—এসব ঘটনার মধ্যে ওয়েলসের প্রিন্স ও প্রিন্সেস একসঙ্গে থেকেছেন।
এত প্রতিকূলতার মধ্যেও, প্রিন্স জর্জ, প্রিন্সেস শার্লট ও প্রিন্স লুই—এই তিন সন্তান তাঁদের কাছে সবসময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। “ওয়েলসের পরিবার তাঁদের সন্তানদের স্বাভাবিক শৈশব দেওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছেন। একইসঙ্গে তারা সন্তানদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি করছেন,” লিখেছেন লেখক রিচার্ড জেরোম।
এর একটি সুন্দর উদাহরণ পাওয়া যায়, যখন কেট তাঁর সন্তানদের নিয়ে উইন্ডসরের কাছে একটি বেবি ব্যাংকে (দুস্থ শিশুদের জন্য জিনিসপত্রের ভান্ডার) গিয়েছিলেন। সেখানে শিশুদের কাপড় ও খেলনা বাছাই করতে দেখে তিনি বলেছিলেন, “তোমরা আজকের স্বেচ্ছাসেবক।”
জেরোম আরও লিখেছেন, “কাজ শেষে তিনি জর্জের কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, ‘তুমি দেখতে পাচ্ছো, এই ধরনের কাজ করা কতটা আনন্দের, যখন তুমি জানতে পারো যে তুমি অন্যদের সাহায্য করছো।” এটি ছিল সেবার মনোভাবের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বর্তমানে, কেট মিডলটন রাজপরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত এবং তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, “তিনি বিষয়গুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে নেন—এবং এটি খুবই ভালো।”
সাবেক বাকিংহাম প্যালেসের যোগাযোগ প্রধান সাইমন লুইসের মতে, “কেটকে উইন্ডসর টিমের কেন্দ্রে থাকা একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।”
কেট তাঁর স্বামীর পাশে থেকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। লেখক ভ্যালেন্টাইন লো বলেন, “তাঁর একটি সুন্দর ও হাসিখুশি ভাবমূর্তি আছে। তবে বাস্তবে তিনি দৃঢ়চেতা, ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন এবং নিজের অধিকার ও সঠিক বিষয়গুলোর জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত।”
কেট ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কাজ করছেন এবং উইলিয়ামের সঙ্গে তাঁর দৃঢ় সম্পর্ক ও নিজের পরিবারের সমর্থন তাঁকে সফল হতে সাহায্য করছে।
তথ্য সূত্র: পিপল