উইন্ডো সিটে যারা উড়তে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ১৫টি প্রয়োজনীয় জিনিস!

উড়োজাহাজে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস।

দীর্ঘ বিমানযাত্রা অনেকের কাছেই বেশ ক্লান্তিকর একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যারা জানালা-সংলগ্ন সিটে বসতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

লম্বা ভ্রমণের সময় যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, তার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। আসুন, এমন কিছু জিনিসের কথা জেনে নেওয়া যাক যা আপনার উড়োজাহাজের অভিজ্ঞতা আরও সুন্দর করে তুলতে পারে:

১. ভ্রমণ বালিশ (Travel Pillow):

উড়োজাহাজে আরাম করে বসার জন্য একটি ভালো মানের ভ্রমণ বালিশ অপরিহার্য। বাজারে বিভিন্ন ধরনের বালিশ পাওয়া যায়, যেমন – ঘাড়ের বালিশ, বিন ব্যাগ বালিশ ইত্যাদি।

এগুলো ভ্রমণের সময় আপনার ঘাড় ও মাথার সঠিক সাপোর্ট দেয়, যা ঘুম বা বিশ্রাম নেওয়ার সময় খুবই প্রয়োজনীয়। ডট অ্যান্ড ডট (Dot&Dot) এর মতো কিছু ব্র্যান্ডের বালিশ পাওয়া যায়, যা সিটের সাথে সহজে মানানসই।

এছাড়াও, বাংলাদেশের বাজারেও ভালো মানের ভ্রমণ বালিশ পাওয়া যায়। দাম: ৮০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

২. আরামদায়ক আচ্ছাদন বা র‍্যাপ (Wrap):

উড়োজাহাজের ঠাণ্ডা পরিবেশ থেকে বাঁচতে একটি আরামদায়ক আচ্ছাদন বা র‍্যাপ খুবই দরকারি। এটি হালকা ও সহজে বহনযোগ্য হওয়া উচিত।

এতে আপনি নিজেকে মুড়ে নিতে পারবেন, যা আপনাকে উষ্ণ রাখবে। অ্যাথলেটা (Athleta) -এর মত কিছু ব্র্যান্ডের র‍্যাপ পাওয়া যায়, যা নরম এবং আরামদায়ক।

এছাড়াও, এটি বালিশ বা স্কার্ফ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। দাম: ২০০০ থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত।

৩. নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন (Noise-canceling Headphones):

উড়োজাহাজে বাইরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোনের জুড়ি নেই। গান শোনা, সিনেমা দেখা বা শান্তভাবে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটি খুবই উপযোগী।

সনির (Sony) মতো ভালো ব্র্যান্ডের হেডফোন পাওয়া যায়, যা শব্দকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। এছাড়া, বাজেট-ফ্রেন্ডলি আরও অনেক বিকল্পও রয়েছে। দাম: ৪০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

৪. পুনঃব্যবহারযোগ্য পানির বোতল (Reusable Water Bottle):

বিমানে ভ্রমণের সময় পর্যাপ্ত জল পান করা জরুরি। তাই একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য পানির বোতল সঙ্গে রাখা ভালো। হাইড্রো ফ্লাস্ক (Hydro Flask) -এর মতো ব্র্যান্ডের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে।

এটি সিটের পকেটে সহজে রাখা যায় এবং জল পান করার সুবিধাও পাওয়া যায়। দাম: ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

৫. ছোট আকারের প্রসাধন সামগ্রীর ব্যাগ (Toiletry Bag):

আপনার প্রয়োজনীয় প্রসাধন সামগ্রী, যেমন – টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, ফেস স্প্রে, লিপ বাম, ইত্যাদি হাতের কাছে রাখার জন্য একটি ছোট ব্যাগ (Toiletry Bag) সাথে রাখুন। কিউয়ানা (Cuyana)-এর মতো ব্র্যান্ডের ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন।

এটি সিটের পকেটে রাখা সুবিধাজনক। দাম: ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত।

৬. স্লিপ মাস্ক (Sleep Mask):

জানালার পাশের সিটে বসলে সূর্যের আলো সরাসরি চোখে লাগতে পারে। তাই ঘুমের জন্য একটি ভালো মানের স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করা প্রয়োজন।

সিল্কের তৈরি স্লিপ মাস্ক ব্যবহার করলে চোখের আরাম হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটে না। স্লিপ সিল্ক (Slip Silk)-এর মাস্ক এক্ষেত্রে ভালো বিকল্প হতে পারে। দাম: ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

৭. কম্প্রেশন মোজা (Compression Socks):

দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে পায়ে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে কম্প্রেশন মোজা ব্যবহার করা যেতে পারে।

এটি পায়ের ফোলাভাব কমায় এবং ভ্রমণের সময় আরাম দেয়। বাজারে বিভিন্ন ডিজাইন ও আকারের কম্প্রেশন মোজা পাওয়া যায়। ডক্টর মোশন (Dr. Motion) -এর মত ব্র্যান্ডের মোজা ব্যবহার করতে পারেন। দাম: ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

৮. বহনযোগ্য চার্জার (Portable Charger):

মোবাইল বা ট্যাবলেটের চার্জ ফুরিয়ে গেলে চিন্তার কারণ নেই। একটি বহনযোগ্য চার্জার আপনার ডিভাইসগুলোকে চার্জ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ভিআরইউআরসি (Vrurc) -এর মত ব্র্যান্ডের চার্জার পাওয়া যায়, যা ছোট ও বহনযোগ্য।

দাম: ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

৯. পায়ের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা (Foot Hammock):

আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য সিটে পায়ের জন্য একটি বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। ফানলেক (Funlake) -এর মতো কিছু ব্র্যান্ডের ফুট হ্যামক পাওয়া যায়, যা আপনার পায়ের জন্য বাড়তি আরাম যোগ করে।

দাম: ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত।

১০. স্লিপার (Slippers):

বিমানে জুতা খুলে আরাম করে থাকার জন্য একজোড়া স্লিপার সঙ্গে নিতে পারেন। রোকুটাস (Rocutus)-এর মতো নন-স্লিপ স্লিপার ব্যবহার করতে পারেন।

দাম: ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

১১. বড় আকারের হুডি (Oversized Hoodie):

ঠাণ্ডা লাগলে শরীর গরম রাখার জন্য একটি বড় আকারের হুডি খুবই উপযোগী। এটি আরামদায়ক এবং সহজে বহনযোগ্য।

আপনি চাইলে এর মধ্যে বালিশও রাখতে পারেন। অ্যানরাবেস (Anrabess)-এর মতো ব্র্যান্ডের হুডি ব্যবহার করতে পারেন। দাম: ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত।

১২. সিট কুশন (Seat Cushion):

দীর্ঘ ভ্রমণের সময় সিটে বসে থাকতে অসুবিধা হলে, একটি সিট কুশন ব্যবহার করতে পারেন। এটি শরীরের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং আরামদায়ক করে তোলে। ওনটাইজ (Ontyzz)-এর মত ব্র্যান্ডের কুশন ব্যবহার করতে পারেন।

দাম: ১০০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

১৩. ই-রিডার (E-reader):

বই পড়ার অভ্যাস থাকলে, ভ্রমণের সময় একটি ই-রিডার সঙ্গে নিতে পারেন। অ্যামাজন কিন্ডল (Amazon Kindle) এক্ষেত্রে ভালো একটি বিকল্প।

এটি হালকা ও বহনযোগ্য, যা অনেক বই ধারণ করতে পারে। দাম: ৮০০০ থেকে ২০০০০ টাকা পর্যন্ত।

১৪. ইয়ারপ্লাগ (Earplugs):

শব্দ থেকে দূরে থাকতে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে পারেন। লুপ ইয়ারপ্লাগ (Loop Ear Plugs) -এর মত ভালো মানের ইয়ারপ্লাগ পাওয়া যায়, যা শব্দ কমাতে সাহায্য করে। দাম: ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

১৫. স্যানিটাইজিং ওয়াইপস (Sanitizing Wipes):

বিমানের সিট, জানালা বা হাতল পরিষ্কার করার জন্য স্যানিটাইজিং ওয়াইপস ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি আপনার স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে সাহায্য করে। অনেস্ট কোম্পানি (The Honest Company)-এর মত ব্র্যান্ডের ওয়াইপস ব্যবহার করতে পারেন।

দাম: ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত।

উপরে উল্লেখিত জিনিসগুলো আপনার বিমান ভ্রমণকে আরও আরামদায়ক এবং উপভোগ্য করে তুলবে। তাই, ভ্রমণের আগে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে নিন এবং আপনার যাত্রা হোক আনন্দময়!

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *