মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জশ কল সম্প্রতি দেশটির সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন নির্বাচনের আগে বিতর্কিত এক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। তিনি চান, ধনকুবের ইলন মাস্ক যেন ভোটারদের মধ্যে ২০ লক্ষ মার্কিন ডলার বিতরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারেন।
কল মনে করেন, মাস্কের এই প্রস্তাব রাজ্যের নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করে।
জানা গেছে, উইসকনসিনের সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনের আগে মাস্ক এমন একটি ঘোষণা দেন, যেখানে তিনি ভোটের বিনিময়ে কিছু সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
কল এর বিরোধিতা করে বলেন, “উইসকনসিনের আইন অনুযায়ী, ভোট দেওয়ার জন্য কোনো প্রকার সুবিধা দেওয়া অবৈধ। অথচ, ইলন মাস্ক ঠিক সেটাই করতে যাচ্ছিলেন।”
এই নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালতের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে যাবে, তা নির্ধারিত হবে। বর্তমানে আদালতটিতে উদারপন্থী বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
তবে, এই নির্বাচনের ফল আগামী দিনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করতে পারে। যেমন – গর্ভপাতের অধিকার, কংগ্রেসের নির্বাচনী এলাকার পুনর্বিন্যাস, শ্রমিক ইউনিয়নের ক্ষমতা এবং ভোট দেওয়ার নিয়ম সংক্রান্ত বিষয়গুলো এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল।
আদালতের এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে, যা বিচার বিভাগীয় নির্বাচনের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, নির্বাচনের প্রচারণায় প্রায় ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি খরচ হয়েছে।
ইলন মাস্ক এবং তাঁর সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মাস্ক এমন একজন প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং অন্যান্য রক্ষণশীলদের সমর্থনপুষ্ট।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় ইলন মাস্ক তাঁর সামাজিক মাধ্যম এক্সে (X) প্রথমে ঘোষণা করেন, তিনি সরাসরি ভোটারদের মধ্যে ২০ লক্ষ ডলার বিতরণ করবেন।
পরে তিনি তাঁর বক্তব্য পরিবর্তন করে জানান, এই অর্থ দেওয়া হবে এমন কিছু ব্যক্তিকে, যারা “অ্যাকটিভিস্ট” বিচারকদের বিরুদ্ধে অনলাইন পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।
আর্ন্তজাতিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-এর তথ্য অনুযায়ী, এর আগে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেও মাস্ক একই ধরনের কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
সে সময় তিনি উইসকনসিনসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোটারদের প্রথম ও দ্বিতীয় সংশোধনী সমর্থনকারী একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করার বিনিময়ে প্রতিদিন ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
উইসকনসিনের এই নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর ফল শুধু রাজ্যের জন্য নয়, বরং জাতীয় পর্যায়েও সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস