ষাটেরও বেশি বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক মার্কিন মহিলাকে সম্প্রতি জীবিত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তিনি নতুন নামে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করছেন।
অড্রে ব্যাকবার্গ নামের ওই মহিলা ১৯৬২ সালে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন, যা আমেরিকার উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে ঘটেছিল।
সৌক কাউন্টি পুলিশ বিভাগ ২রা মে তারিখে ব্যাকবার্গের নিখোঁজ হওয়ার দীর্ঘদিনের মামলার সমাধান করে। উইসকনসিন মিসিং পার্সনস অ্যাডভোকেসি (নিখোঁজ ব্যক্তি বিষয়ক সহায়তা সংস্থা) ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় ব্যাকবার্গের বয়স ছিল ২০ বছর।
তিনি উইসকনসিনের রিডসবুর্গ শহরে থাকতেন এবং তাঁর স্বামী রোনাল্ডের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে তিনি আত্মগোপন করেন।
বর্তমানে ব্যাকবার্গের বয়স ৮২ বছর। তিনি নতুন একটি পরিচয় নিয়ে বসবাস করছেন এবং দ্বিতীয়বার বিবাহ করেছেন। যদিও তদন্তের স্বার্থে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন, তবে তাঁর বর্তমান স্বামীর সঙ্গে সন্তান আছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি।
চিওপেওয়া হেরাল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিটেকটিভ আইজ্যাক হ্যানসন জানান, “আমরা তাঁর গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলাম। তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্তুষ্ট বলেই মনে হয়েছে।
তিনি পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।”
ব্যাকবার্গ নিখোঁজ হওয়ার কয়েকদিন আগে, তাঁর প্রথম স্বামী রোনাল্ডের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, রোনাল্ড তাঁকে মারধর করেছেন এবং হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
এছাড়াও, স্বামীকে তিনি তাঁর গাড়িতে বন্দুক রাখতেও দেখেছিলেন।
২০০২ সালে বারাবো নিউজ রিপাবলিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, সাবেক সোক কাউন্টি শেরিফ র্যান্ডি স্ট্যামেন জানান, “মিসিং হওয়ার ৪০ বছর পরে জানা যায়, ব্যাকবার্গ তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন যে তিনি তাঁকে মারধর করে গুরুতর জখম করেছেন।”
১৯৬২ সালের ৭ই জুলাই সকালে, ব্যাকবার্গ স্থানীয় একটি উলের মিলে বেতন নিতে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি।
ব্যাকবার্গের স্বামী রোনাল্ড প্রথমে তাঁর আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিন্তু তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
উইসকনসিন মিসিং পার্সনস অ্যাডভোকেসি আরও জানায়, ব্যাকবার্গ নিখোঁজ হওয়ার কিছু দিন পর, তাঁদের ১৪ বছর বয়সী এক প্রতিবেশিনী জানান যে, তিনি ও ব্যাকবার্গ মিলে প্রথমে গাড়িতে করে ম্যাডিসন যান এবং সেখান থেকে বাসে করে ইন্ডিয়ানাপলিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
ইন্ডিয়ানাপলিসে পৌঁছানোর পর ওই কিশোরী আর বাড়ি ফিরতে চাননি। ব্যাকবার্গকে শেষবার একটি বাস স্টপের কাছে দেখা গিয়েছিল।
নিখোঁজ হওয়ার পর, ব্যাকবার্গ তাঁর পরিবারের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করেননি। তাঁর মা ২০২৩ সালে এবং এক সন্তান ২০০৬ সালে মারা যান।
ডিটেকটিভ হ্যানসন এই পুরনো মামলার দায়িত্ব পান জানুয়ারী মাসে এবং ২০০২ সালের পর প্রথমবারের মতো মামলার নথিগুলো ডিজিটাইজ করেন।
তদন্তের স্বার্থে ডিটেকটিভ হ্যানসন ব্যাকবার্গের পরিবারের ২০ জন সদস্য ও সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এমনকি ব্যাকবার্গের বোনের একটি ‘অ্যানসেস্ট্রি ডটকম’ প্রোফাইল থেকেও তিনি কিছু তথ্য সংগ্রহ করেন।
ডিটেকটিভ হ্যানসন বলেন, “বিষয়টি ছিল যেন অনেকগুলো টুকরো ছবি একসঙ্গে করা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে সব তথ্য একত্রিত করি।”
যদি আপনিও কোনো ধরনের পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন, তবে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করুন অথবা আপনার এলাকার কোনো সহায়তা কেন্দ্রে যান।
তথ্য সূত্র: পিপল