রান্না একটি শিল্প, যা অনেকের কাছেই ভালোবাসার প্রতীক। আর সেই ভালোবাসাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন লাইবেরিয়ান-অস্ট্রেলিয়ান শেফ ইভেট কুইওবিয়া।
দীর্ঘ ১৪০ ঘণ্টা, ১১ মিনিট, ১১ সেকেন্ড একটানা রান্না করে তিনি গড়েছেন বিশ্ব রেকর্ড। রান্নার ম্যারাথনে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই নারী।
শেফ ইভেট কুইওবিয়া, যিনি বর্তমানে মেলবোর্নে বসবাস করেন, ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই বিরল কীর্তি স্থাপন করেন।
এর আগে দীর্ঘতম রান্নার বিশ্বরেকর্ডটি ছিল ১১৯ ঘণ্টা, ৫৭ মিনিট, ১৬ সেকেন্ডের। কুইওবিয়া তাঁর রান্নার এই দীর্ঘ যাত্রায় লাইবেরিয়ান বিভিন্ন পদ তৈরি করেছেন।
এর মধ্যে ছিলো জলোফ রাইস, কাসাভা পাতা, ওকরা এবং বাঁধাকপির স্ট্যু-এর মতো সুস্বাদু খাবার।
যুদ্ধবিধ্বস্ত লাইবেরিয়াতে জন্ম নেওয়া কুইওবিয়ার শৈশব কেটেছে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে। উদ্বাস্তু হিসেবে বিভিন্ন দেশে ঘুরে অবশেষে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হন।
নিজের সংগ্রামের দিনগুলোর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই আমি বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম। আমার মনে হতো, জীবনে এমন কিছু করতে চাই যা সাধারণের থেকে আলাদা।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের এই রান্নার ম্যারাথন আমার সেই স্বপ্ন পূরণের সুযোগ এনে দিয়েছে।”
এই চ্যালেঞ্জটি ছিল খুবই কঠিন। অংশগ্রহণকারীদের প্রতি ৪ ঘণ্টা পর ২০ মিনিটের বিরতি নেওয়ার অনুমতি ছিল, কিন্তু কুইওবিয়ার জন্য বিশ্রাম নেওয়াটাও সহজ ছিল না।
তিনি জানান, “আমি যখনই সামান্য সময়ের জন্য ঘুমিয়েছি, তখনই কাজে ফিরতে আমার খুব অসুবিধা হয়েছে। দলের সদস্যরা আমাকে জেগে থাকতে সাহায্য করেছে।”
দিনের পর দিন রান্নার কাজটি চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে থেকেও তিনি অবিচল ছিলেন।
তাঁর কমিউনিটি এবং ছেলের সমর্থন ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। রেকর্ড ভাঙার পর, যখন তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলো, তখন তিনি যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
কুইওবিয়া আরও বলেন, “আমি নারী, বিশেষ করে সিঙ্গেল মাদার এবং তরুণীদের উৎসাহিত করতে চাই।
তোমরা যা করছো, যদি বড় কিছু করার স্বপ্ন থাকে, তবে আশা আছে। প্রত্যেকেরই সুযোগ আছে।”
এই বিশ্ব রেকর্ড নিঃসন্দেহে কুইওবিয়ার আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর এই সাফল্যে শুধু তিনি নন, বরং বিশ্বজুড়ে নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
তথ্য সূত্র: পিপল