বন্ধুত্বের খাতিরে ঋণ দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক অনেক সময়ই জটিল হয়ে দাঁড়ায়। সম্প্রতি এমনই এক দ্বিধায় পড়েছেন এক নারী। জরুরি মেরামতের জন্য বন্ধুর কাছ থেকে ২০০০ ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা প্রায় [BDT equivalent amount] টাকার সমান) ধার চেয়েছেন তিনি। বন্ধুকে সাহায্য করবেন, নাকি নিজের আর্থিক নিরাপত্তা আগে দেখবেন—এই দোটানায় পড়ে যুক্তরাজ্যের একটি অনলাইন ফোরামে (Mumsnet) পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।
ওই নারীর বন্ধু এবং তাঁর সঙ্গীর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। গাড়ির মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পেরে তাঁরা ওই নারীর কাছে হাত পাতেন। জানা যায়, বন্ধুর গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার ফল ভালো না হওয়ায় দ্রুত মেরামতের প্রয়োজন। তাঁদের ব্যাংক ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারেরও সুযোগ নেই। এমনকি, তাঁদের কোনো সঞ্চয়ও নেই।
অন্যদিকে, ওই নারীর নিজের সঞ্চয়ে রয়েছে প্রায় ৫০০০ ডলার। তবে বন্ধুকে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ধার দিতে তিনি দ্বিধা বোধ করছেন। এর পেছনে তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে।
প্রথমত, তিনি অবিবাহিত এবং সম্প্রতি নিজের একটি বাড়ি কিনেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমার সঞ্চয়গুলো জরুরি অবস্থার জন্য, যদি চাকরি চলে যায় অথবা বাড়ির কোনো মেরামতের প্রয়োজন হয়, তবে কাজে লাগবে। আমার পাশে আর্থিক সাহায্য করার মতো কোনো পরিবার বা সঙ্গী নেই।’
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে তিনি জানান, তাঁর বন্ধুর সঙ্গী গত বছর তাঁর আগের কর্মস্থল থেকে প্রায় ২২ হাজার ডলার পেয়েছিলেন, যা তাঁরা কোনো সঞ্চয় না করে খরচ করে ফেলেছেন। ওই নারীর মতে, ‘টাকাগুলো খরচ করার ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো দূরদর্শিতা ছিল না।’
তৃতীয়ত, ওই নারী মনে করেন, বন্ধুকে টাকা ধার দিলে তা ফেরত পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাঁর আশঙ্কা, বন্ধু যদি টাকা ফেরত দিতে না চায়, তবে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবেন না। সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, ‘না’ বললে বিষয়টি বেশ অস্বস্তিকর হবে। মনে হচ্ছে, তাঁরা আমাকে একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছেন।’
বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে আলোচনা শুরু হলে, অধিকাংশ ব্যবহারকারী ওই নারীকে ঋণ দিতে রাজি না হওয়ার পরামর্শ দেন। তাঁদের মতে, ধার দিলে হয়তো সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, ‘এই কাজটি করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। নিজের সঞ্চয়ের ৪০ শতাংশ কাউকে দিয়ে দেওয়াটা বোকামি।’
আরেকজন মন্তব্য করেন, ‘ঋণ পরিশোধ করার মতো ক্ষমতা তাঁদের নেই। কারণ, তাঁদের খারাপ ক্রেডিট স্কোর রয়েছে, কোনো সঞ্চয়ও নেই।’ এছাড়া, বন্ধুদের অর্থ খরচ করার ধরনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘২২ হাজার ডলার উড়িয়ে দেওয়ার পর তাঁদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?’
অন্য একজন ব্যবহারকারী নিশ্চিত করেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আপনি কোনো ভুল করছেন না। বরং, তাঁরাই আপনাকে এই অবস্থায় ফেলেছে। এখন ‘না’ বলতে খারাপ লাগলেও, টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তাঁদের পেছনে ছোটা আরো খারাপ হতো। তাই, কোনো দ্বিধা ছাড়াই ‘না’ বলুন।’
অন্য একজন মন্তব্য করেন, ‘এমন কাউকে টাকা ধার দেবেন না যা হারাতে আপনার কষ্ট হবে।’ বন্ধু বা পরিচিতদের আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি আমাদের সমাজে খুবই সংবেদনশীল। এক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে স্বচ্ছতা এবং বোঝাপড়া থাকাটা জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে কোনো তিক্ততার সৃষ্টি না হয়।
তথ্য সূত্র: People