বাড়ি ফিরেই দুঃস্বপ্ন! গাছের বদলে শূন্যতা, কান্নায় ভাসলেন নারী!

হঠাৎ করেই উধাও, প্রিয় গাছের স্মৃতি: এক নারীর্তিহীনতা

ছোটবেলার স্মৃতিবিজরিত বাড়িতে ফিরতেই বুকটা যেন খালি হয়ে গেল ব্রুকের। বাড়ির উঠোনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দাঁড়িয়ে থাকা, তাদের পরিবারের ভালোবাসার প্রতীক সেই গাছটি নেই! চোখের সামনে শুধু একটা শূন্যতা। কাউকে কিছু না জানিয়ে, কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

“আমি তো আমার বাড়িটা চিনতেই পারিনি। বাড়ির সামনে আসতেই কেমন যেন অচেনা লাগছিল। কয়েকবার এদিক ওদিক ঘুরেও যেন বিশ্বাস হতে চাইছিল না”, জানালেন ব্রুক। তার বাবার ছেলেবেলা থেকে, এমনকি দাদার সময় থেকেও, এই গাছটি তাদের পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল। যেন পরিবারেরই একজন সদস্য ছিল সেটি।

গাছটি হারানোর বেদনা বুঝিয়ে বোঝানো কঠিন। ব্রুকের মনে হয়েছে, কেউ যেন তার ব্যক্তিগত পরিসরে অনুপ্রবেশ করেছে। “যেন কেউ আমার বাড়ির সীমানা পেরিয়ে, আমার একান্ত নিজস্ব স্থানে ঢুকে এই কাজটা করেছে”, ঘটনার অভিঘাত এখনো ভুলতে পারেননি তিনি।

ঘটনার আকস্মিকতা বুঝিয়ে ব্রুকের একটি আবেগঘন টিকটক ভিডিও দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়। বহু মানুষ তার এই কষ্টকে নিজেদের মতো করে অনুভব করেছেন। “ছোটবেলা থেকে যে গাছটাকে আমি দেখেছি, সেটা চোখের সামনে থেকে এভাবে চলে যাওয়াটা, সত্যিই অবিশ্বাস্য”, তিনি বলেন।

গাছটি কাটার কারণ জানতে উদগ্রীব হয়ে ব্রুক এলাকার কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কেউই কিছু জানে না। “আমি এলাকার কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতির সঙ্গে কথা বলেছি, প্রতিবেশীদেরও জিজ্ঞাসা করেছি, কিন্তু কেউ জানে না গাছটি কে কাটল বা কেন কাটল”, জানান তিনি।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও কোনো সদুত্তর মেলেনি। ব্রুক যেন একা হয়ে গিয়েছেন। “প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল, এখনো পর্যন্ত কোনো খবর পাইনি। এটা খুব হতাশাজনক”, তিনি যোগ করেন।

বিদ্যুৎ লাইনের কোনো সমস্যা ছিল না, তাই কর্তৃপক্ষের গাছ কাটার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রুকের ধারণা, হয়তো অন্য কোনো কারণে এমনটা হয়েছে।

গাছটি হারানোর কষ্ট ব্রুকের পরিবারকেও ছুঁয়ে গেছে। পরিবারের সবাই যেন এক গভীর শোকের মধ্যে রয়েছেন। ব্রুকের বাবা, যিনি এই বাড়িতেই বড় হয়েছেন এবং তার বাবাও একসময় এই গাছের ছায়ায় সময় কাটিয়েছেন, তাদের জন্য এই ক্ষতি অনেক বেশি কষ্টের।

গাছটি না থাকার কারণে ব্রুকের বাড়ির পরিবেশেও পরিবর্তন এসেছে। “আমি হয়তো নিজেকে নিরাপদ মনে করছি না, তবে আগের মতো স্বাভাবিকও নেই”, তিনি বলেন। বাড়ির বাইরের খোলা জায়গাটি এখন আগের মতো নেই, যা তাকে আরও বেশি অসহায় করে তুলেছে।

তবে এই কঠিন সময়ে ব্রুক অনলাইন কমিউনিটির কাছ থেকে অনেক সমর্থন পেয়েছেন। অপরিচিত মানুষেরা তাকে সাহস জুগিয়েছে, পরামর্শ দিয়েছে। তিনি এখন কিভাবে গাছটিকে পুনরায় ফিরিয়ে আনা যায়, সেই বিষয়ে গবেষণা করছেন। এছাড়াও, তিনি তার অধিকার সম্পর্কেও জানতে চাইছেন।

“আমার মনে হয়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গাছ কাটার আগে আমাদের জানানো উচিত ছিল। তারা সেটা করেনি”, ব্রুক বলেন।

কিন্তু কে বা কারা এই কাজটি করেছে, তা জানা না গেলে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়াও সম্ভব নয়। ক্ষতিপূরণ পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। ব্রুক এখন একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিচ্ছেন, যিনি তাকে এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবেন।

ব্রুক চান, তার এই ঘটনা অন্যদেরও প্রকৃতির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করবে। “আমরা সবাই পরিবেশগত সংকটের মধ্যে রয়েছি। গাছ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গাছ কাটা হলে, চারপাশের পরিবেশটা কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে যায়”, তিনি মনে করেন। তার কাছে গাছ হলো ‘জীবন্ত, শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া এক সত্তা’, যা আমাদের চারপাশের স্থানগুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।

অন্যান্য মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সমর্থন ব্রুককে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

ব্রুকের এই যাত্রা এখনো শেষ হয়নি। তিনি চান, তার এই অভিজ্ঞতা অন্যদেরও তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে এবং একে অপরের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত করবে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *