নারী ফুটবলে বেতন বৈষম্য : ফিফার প্রতিবেদনে উদ্বেগ
বিশ্বজুড়ে নারী ফুটবলারদের বেতন কাঠামো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিফা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, পেশাদার নারী ফুটবলারদের গড় বার্ষিক আয় এখনো খুবই কম, যা শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়দের তুলনায় অনেক নিচে।
ফিফার ‘সেটিং দ্য পেস’ শীর্ষক বেঞ্চমার্কিং রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে একজন নারী ফুটবলারের গড় আয় বছরে প্রায় ১১ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১২ লাখ টাকার সমান)। তবে, শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোতে খেলোয়াড়দের বেতন তুলনামূলকভাবে বেশি।
ফিফার বিবেচনায় ‘টায়ার ১’ হিসেবে চিহ্নিত ১৬টি দেশের ৪১টি ক্লাবের নারী ফুটবলারদের গড় বেতন প্রায় ২৪ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২৬ লাখ টাকা)। এই ক্লাবগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কিছু দল তাদের খেলোয়াড়দের বছরে গড়ে প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি (প্রায় ৫৪ লাখ টাকার বেশি) বেতন দিয়ে থাকে।
সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া খেলোয়াড়ের বার্ষিক আয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা)।
অন্যদিকে, ‘টায়ার ২’ এবং ‘টায়ার ৩’-এর ক্লাবগুলোতে বেতন অনেক কম। এই দুটি স্তরের ক্লাবগুলোতে নারী ফুটবলারদের গড় বেতন যথাক্রমে ৪,৩৬১ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা) এবং ২,৮০৫ মার্কিন ডলার (প্রায় ৩ লাখ ৫ হাজার টাকা)।
প্রতিবেদনে খেলোয়াড়দের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি খেলোয়াড়দের একটি ক্লাবের সঙ্গে বেশি দিন যুক্ত থাকতে সাহায্য করে, যা তাদের খেলার ওপর মনোযোগ দিতে সহায়ক হয়।
‘টায়ার ১’-এর ক্লাবগুলোতে সাধারণত এক থেকে তিন বছরের চুক্তি দেখা যায়, যেখানে ‘টায়ার ৩’-এর ক্লাবগুলোতে তিন মাসের কম সময়ের চুক্তি বেশি প্রচলিত।
এছাড়াও, নারী ফুটবল ম্যাচগুলোতে দর্শক উপস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর আর্সেনাল তাদের মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে একটি ম্যাচে রেকর্ড ৬0,160 জন দর্শক আকর্ষণ করতে পারলেও, ‘টায়ার ১’-এর ক্লাবগুলোর গড় দর্শক সংখ্যা ছিল ১,৭১৩ জন।
‘টায়ার ২’ এবং ‘টায়ার ৩’-এর ক্লাবগুলোতে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৮০ এবং ৩৮০ জন।
কোচিং পদে নারীদের কম প্রতিনিধিত্ব নিয়েও ফিফা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব স্তরের নারী দলের প্রধান কোচের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ নারী। তবে, রেফারিদের ক্ষেত্রে কিছুটা বেশি নারী প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়, যা প্রায় ৪২ শতাংশ।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, এই প্রতিবেদন ক্লাব, লীগ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের নারী ফুটবলের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে।
তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক বছরে নারী ফুটবলে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে, তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনা বিকাশে আরও অনেক কাজ করতে হবে।
এই প্রতিবেদন তৈরির জন্য ১৩৫টি লীগ এবং ১,৫১৮টি ক্লাবের কাছে জরিপ পাঠানো হয়েছিল, যার মধ্যে ৬৭৭টি ক্লাব তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ফিফা বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ক্লাবগুলোকে ‘টায়ার’-এ ভাগ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে লীগের ক্লাব লাইসেন্সিং ব্যবস্থা, ২০২৩ সালের নারী বিশ্বকাপে লীগের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ এবং নারী ফুটবলের জন্য একটি সদস্য সংস্থার বাজেট ইত্যাদি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান