কাঠ খোদাই : মানসিক শান্তির এক নতুন উপায়
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং মানসিক আঘাতের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ এখন নানা উপায় খুঁজছে। এই পরিস্থিতিতে, কাঠ খোদাইয়ের মতো একটি শিল্পকর্ম মানসিক শান্তির উপায় হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
যুক্তরাজ্যে (UK) এই বিষয়টি নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে এবং অনেকেই একে জীবনের নতুন দিক হিসেবে গ্রহণ করছেন।
যুক্তরাজ্যে স্যামুয়েল আলেকজান্ডার নামের একজন শিল্পী কাঠ খোদাই শুরু করেন, যখন তিনি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং পিটিএসডি (PTSD) -তে আক্রান্ত হন। তিনি এখন ইন্সটাগ্রামে “শান্তিপূর্ণ খোদাই” বিষয়ক ভিডিও তৈরি করেন, যা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার ইউটিউব ভিডিওগুলোতে নিয়মিত ৬০,০০০ এর বেশি দর্শক হয়।
তিনি জানান, কাঠ খোদাই তাকে নিজের ভেতরের শান্তির সন্ধান দিতে সাহায্য করেছে। শুধু তাই নয়, তিনি “লন্ডন গ্রিন উড” নামক একটি সংস্থার সাথে বিনামূল্যে আশ্রয়প্রার্থী এবং গৃহহীন মানুষদের জন্য কাঠ খোদাইয়ের কর্মশালা পরিচালনা করেন।
কাঠ খোদাইয়ের সঙ্গে জড়িত জোজো উড নামের একজন শিল্পীও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য এই শিল্পের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন। তিনি মনে করেন, কাঠ খোদাইয়ের মাধ্যমে মানুষ তাদের ভেতরের কথা প্রকাশ করতে পারে এবং মানসিক চাপ কমাতে পারে।
জোজো’র বাবা রবিন উড “স্পুনফেস্ট” নামে একটি বার্ষিক কাঠের চামচ খোদাই উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১২,০০০ বছর আগেও কাঠ খোদাইয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে, এই শিল্পকর্মটি সাধারণত বয়স্ক এবং শ্বেতাঙ্গ পুরুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে, এই ধারণা পাল্টে যাচ্ছে।
এখন এই শিল্পকর্মে নারী এবং তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা একটি ইতিবাচক দিক।
এই শিল্পের প্রসারের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বার্মিংহামের “পথ কারভার্স” নামের একটি সংস্থা ঐতিহ্যবাহী শিল্প এবং সৃজনশীল কার্যক্রমকে শহরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
তারা বিনামূল্যে কাঠ খোদাইয়ের কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে তরুণদের ছুরি বিষয়ক অপরাধ থেকে দূরে রাখতে চামচ খোদাই শেখানো হয়। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ক্যাথারিনা কারচার এই কর্মশালায় ছুরির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব লন্ডনের শিল্পী সোফি সেলু কাঠ খোদাই শেখান। তিনি জানান, কর্মশালায় আসা তরুণীরা প্রথমে কিছুটা অস্থির থাকলেও, কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা শান্ত ও গভীর মনোযোগী হয়ে ওঠে।
সোফি তার “গ্রেইন অ্যান্ড নট” নামক ব্যবসার মাধ্যমে ঝড়ে পড়া এবং পুনরুদ্ধার করা কাঠ দিয়ে তৈরি নানান জিনিস বিক্রি করেন, যেগুলোর দাম প্রায় ৬০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৮০,০০০ টাকার কাছাকাছি।
যারা মানসিক শান্তির জন্য একটি উপায় খুঁজছেন, তাদের জন্য কাঠ খোদাই একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে। এটি মনোযোগ বাড়াতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং আত্মপ্রকাশের সুযোগ তৈরি করতে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: