পনিরের পেছনে জীবন বাজি! বিশ্বের কুখ্যাত দৌড়ে হাড় ভাঙার গল্প

ইংল্যান্ডের সবুজ প্রান্তরে, যেখানে আকাশ ছুঁই ছুঁই, সেখানে প্রতি বছর মে মাসের শেষ দিকে এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। নাম তার ‘চীজ রোলিং রেস’ বা পনির দৌড় প্রতিযোগিতা। অনেকটা সিনেমার দৃশ্যের মতো, যেখানে একদিকে থাকে বিশাল আকারের ডাবল গ্লুচেস্টার পনিরের চাকা, আর অন্যদিকে থাকে সেই পনিরের পেছনে ছুটে চলা মানুষের দল।

আপাতদৃষ্টিতে মজাদার মনে হলেও, এই দৌড় প্রতিযোগিতা আসলে ভয়ঙ্কর রকমের ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রতিযোগিতার স্থানটি হলো ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারশায়ারের ব্রকওয়ার্থ গ্রামের কুপার’স হিল। এই পাহাড় এতটাই খাড়া যে, দৌড় শুরু করার আগে অনেকেরই মাথা ঘোরার উপক্রম হয়।

নিয়ম খুবই সোজা – পাহাড়ের ওপর থেকে গড়িয়ে দেওয়া পনিরের চাকাকে ধরতে পারলেই জয়। কিন্তু কাজটি মোটেও সহজ নয়।

কারণ, পাহাড়ের ঢাল এতটাই বেশি যে, একবার দৌড় শুরু করলে শরীরের ভারসাম্য রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।

এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দীর্ঘ ইতিহাস। ধারণা করা হয়, একসময় শস্যক্ষেতের ভালো ফলনের জন্য কৃষকরা এই ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন।

আবার কারো কারো মতে, এটা ছিলো প্রাচীনকালে ব্যারেল বা কাঠের পিপা তৈরির কারিগরদের তৈরি করা পিপার মান পরীক্ষার একটি উপায়। যাই হোক কালের পরিক্রমায় এই প্রতিযোগিতা আজও টিকে আছে, আর স্থানীয়দের কাছে এটি একটি গর্বের বিষয়।

পনির দৌড়ে আহত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। প্রতি বছরই এখানে মারাত্মক সব আঘাতের ঘটনা ঘটে।

হাড় ভাঙা থেকে শুরু করে মারাত্মক মাথা-আঘাত—সবই এখানে সাধারণ ঘটনা। একবার তো এমনও দেখা গিয়েছিল যে, কয়েকজন প্রতিযোগী মারাত্মক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায়, তাদের দেশে ফেরার ফ্লাইটও মিস হয়ে গিয়েছিল।

এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সফল প্রতিযোগী হলেন ক্রিস অ্যান্ডারসন। তিনি একাই ২৩ বার এই খেতাব জিতেছেন।

এমনকি একবার তো তিনি একই দিনে তিনটি রেস জিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। ক্রিস বলেন, ‘এখানে নিজের সুরক্ষার কথা ভুলে যেতে হয়’।

প্রতিযোগিতার শুরুতে সবাই হাসিখুশি থাকলেও, পাহাড়ের নিচে আহতদের আর্তনাদ আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন সবসময়ই একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে।

মজার বিষয় হলো, এত ঝুঁকির পরও এই প্রতিযোগিতায় মানুষের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। বরং দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসে।

তবে এখানকার স্থানীয়রাই যেন এই খেলার আসল চ্যাম্পিয়ন। ক্রিস অ্যান্ডারসন বলেন, “আমি বন্ধুদের সঙ্গে এখানে এসে মাতাল হয়ে একে অপরের দিকে ঢিল ছুঁড়তাম”।

পাহাড়ের ঢাল এতটাই খাড়া যে, শুরুতে এর দিকে তাকালে গা শিউরে ওঠে।

প্রথম ১০ মিটারের মতো প্রায় খাড়া থাকে, যেখানে পা রাখাটাও কঠিন। একবার দৌড় শুরু করলে, শরীরের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

এখানে যারা অংশগ্রহণ করে, তাদের একটাই চেষ্টা থাকে—পড়ে গেলেও দ্রুত উঠে দাঁড়ানো।

প্রতিযোগিতার আয়োজকরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এখানে অংশগ্রহণকারীদের নিজেদের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়াতে হয়। কোনো ধরনের আঘাত পেলে এর দায়ভার তারা নিবেন না।

এমনকি, আহত হলে ক্ষতিপূরণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

এই ভয়ঙ্কর প্রতিযোগিতার আকর্ষণ এখনো অটুট। একদিকে যেমন জয়ী হওয়ার আনন্দ, তেমনি এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শরীরের চরম ঝুঁকি।

হয়তো এ কারণেই, চীজ রোলিং রেস আজও বিশ্বজুড়ে এত মানুষের কাছে প্রিয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *