আতঙ্কের মাঝেও টোকিওর বাজিমাত, ৬% লাফ! বিশ্ব শেয়ার বাজারের হালচাল

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা, শুল্কের ধাক্কায় টালমাটাল অর্থনীতি, বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা?

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা গেছে। মঙ্গলবার (গতকালের) বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করলেও, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা এখনো কাটেনি।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে হংকংয়ের শেয়ার বাজারে সোমবার ১৩ শতাংশের বেশি দরপতন হয়, যা ১৯৯৭ সালের এশীয় আর্থিক সংকটের পর থেকে একদিনে সবচেয়ে বড় পতন ছিল।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে এবং এর উপযুক্ত জবাব দেবে। ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে জার্মানির ডিএএক্স সূচক সামান্য বেড়েছে, প্যারিসের সিএসি ৪০ সূচকেও ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। ব্রিটেনের এফটিএসই ১০০ সূচকও বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ভবিষ্যৎ ১.৫ শতাংশ এবং ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজের ভবিষ্যৎ ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। টোকিওতে নিক্কেই ২২৫ সূচক ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে।

হংকংয়ের শেয়ার বাজারও কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চীনের কেন্দ্রীয় বিনিয়োগ তহবিল, সেন্ট্রাল হুইজিন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোকে শেয়ার কেনার নির্দেশ দেওয়ার পর সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি সূচক সামান্য বেড়েছে।

তবে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার বাজার ছুটির পর পুনরায় চালু হওয়ার পর দরপতন হয়েছে।

অন্যদিকে, তাইওয়ানের তাইইক্স সূচক ৪ শতাংশ কমেছে। এর কারণ ছিল বিশ্বের বৃহত্তম কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারক তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কর্পোরেশন (টিএসএমসি)-এর শেয়ারের দরপতন।

সোমবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.২ শতাংশ কমেছে। বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ডাউ জোন্স ০.৯ শতাংশ এবং নাসডাক কম্পোজিট সামান্য বেড়েছে।

শেয়ার বাজারের এই অস্থিরতার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীরা এখনো আশা করছেন আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে শুল্ক আরোপের মতো কঠোর পদক্ষেপগুলো এড়ানো যেতে পারে।

বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়লে তেলের দাম কমে যেতে পারে। অপরিশোধিত তেলের ব্যারেল সোমবার ৬০ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল, তবে মঙ্গলবার তা সামান্য বেড়ে ৬১.৩৭ ডলারে পৌঁছেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের দর কমেছে, ইউরোর দরও কমেছে। সোনার দাম বেড়েছে, সেই সঙ্গে বিটকয়েনের দামেও উত্থান দেখা গেছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হলো, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশ্ববাজারে যদি চাহিদা কমে যায়, তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমতে পারে।

একইসঙ্গে, আমদানি পণ্যের দাম বাড়লে তা দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি ঘটাতে পারে। তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষ করে, বাণিজ্য চুক্তি এবং নতুন বাজার অনুসন্ধানের ওপর জোর দিতে হবে, যাতে বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতার মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

তথ্য সূত্র:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *