যুদ্ধ শেষে নাৎসিদের আত্মসমর্পণে সাংবাদিকদের সাহসী ভূমিকা!

৮০ বছর আগে, ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিল আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ (এপি)।

১৯৪৫ সালের ৭ই মে, জার্মানির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটেছিল, যা বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এপি’র সাংবাদিক এবং আলোকচিত্রীরা সেই সময় উপস্থিত ছিলেন এবং নাৎসিদের পরাজয়ের খবর বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন।

ফ্রান্সের রাইমসে (Reims, রাইমস) একটি স্কুলে জার্মান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়।

এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে, এপি’র সাংবাদিক এডওয়ার্ড কেনেডি, মিত্রশক্তির কাছে জার্মানির আত্মসমর্পণের খবর সবার আগে প্রকাশ করেন। যদিও মিত্রপক্ষের কিছু নেতা খবরটি দেরিতে প্রচার করতে চেয়েছিলেন, কারণ সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন চেয়েছিলেন বার্লিনে দ্বিতীয় একটি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান করতে।

কিন্তু কেনেডি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে খবরটি প্রকাশ করেন, যা পরে বিতর্কের জন্ম দেয়। এই ঘটনার জন্য এপি-কে কেনেডিকে বরখাস্ত করতে হয়েছিল, যদিও পরে তারা তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছিল।

এপি-র তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও সিইও টম কার্লি বলেছিলেন, কেনেডি ‘ঠিক কাজটিই’ করেছিলেন, কারণ খবরটি গোপন রাখার কারণ ছিল রাজনৈতিক, সৈন্যদের রক্ষার জন্য নয়।

রাইমসে, জার্মান জেনারেল আলফ্রেড জোডল, (Col-Gen. Alfred Jodl) আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন।

তাঁর পিছনে টাঙানো ছিল মিত্রশক্তির হতাহতের একটি তালিকা। জোডল আত্মসমর্পণের পর জার্মান জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের আবেদন জানান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেনারেল আইজেনহাওয়ার সহ মিত্রশক্তির শীর্ষস্থানীয় সামরিক কর্মকর্তারা।

তাঁরা জার্মানদের বর্বরতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী ছিলেন।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিভিন্ন দেশে আনন্দের ঢেউ লাগে।

ইতালির রোমে (Rome, রোম) সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ঘণ্টা বাজানো হয়, আর মিত্রশক্তির রাজধানীগুলোতে বিজয় উৎসবের ঘোষণা করা হয়। লন্ডনের রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ, যা ১৯১৮ সালের যুদ্ধবিরতির থেকেও বড় উদযাপনের জন্ম দেয়।

ওয়াশিংটনেও (Washington, ওয়াশিংটন) মানুষজন বিজয় দিবস পালনের জন্য একত্রিত হয়েছিল।

যুদ্ধবিধ্বস্ত বার্লিনের (Berlin, বার্লিন) অবস্থা ছিল ভয়াবহ। শহরের কেন্দ্র কয়েক মাইলের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের প্রধান রাস্তাগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, যা পুনর্গঠনের জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সৈন্যরাও মিত্রশক্তির হয়ে যুদ্ধ করেছিল। তাঁদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ছিল এই যুদ্ধের ইতিহাসে।

যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর, বিশ্ব নতুন করে জেগে উঠেছিল, যা ছিল ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *