কাশ্মীরে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে বিশ্বের উচ্চতম রেল সেতু!

কাশ্মীরে বিশ্বের উচ্চতম রেল সেতু : প্রকৌশল বিদ্যার এক অনন্য দৃষ্টান্ত

জম্মু ও কাশ্মীর উপত্যকায়, যা ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যে বিতর্কিত একটি অঞ্চল, সম্প্রতি উদ্বোধন করা হয়েছে বিশ্বের উচ্চতম রেল সেতু। চেনাব নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি ভারতীয় প্রকৌশলবিদ্যার এক দারুণ নজির। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই অত্যাশ্চর্য কাঠামোর উদ্বোধন করেন, যা কাশ্মীরকে ভারতের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

এই রেল সেতুটি শুধু উচ্চতার দিক থেকেই অসাধারণ নয়, এর নির্মাণশৈলীও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ১,১৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই সেতুটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের চেয়েও ২৯ মিটার বেশি উঁচু। এর নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, যা বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে বিশাল অঙ্কের সমান। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১,৩১৫ মিটার বা প্রায় ৪,৩১৪ ফুট।

এটি কাশ্মীর উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত একটি বৃহত্তর রেল প্রকল্পের অংশ। এই প্রকল্পের নাম হল ‘উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুল্লা রেল লিংক’।

এই প্রকল্পের রাজনৈতিক গুরুত্বও রয়েছে। ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেষ্টা করছে। ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের একটি বিশেষ ধারা বাতিল করার মাধ্যমে কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এর ফলে এই অঞ্চলের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পদক্ষেপের ফলে কাশ্মীরকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়, যা সরাসরি নয়াদিল্লির অধীনে আসে।

তবে, এই প্রকল্পের কিছু সম্ভাব্য নেতিবাচক দিকও রয়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, এই ধরনের বৃহৎ নির্মাণ প্রকল্পগুলি সেখানকার ভঙ্গুর পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। হিমালয় অঞ্চলে এর আগেও এমন কিছু অবকাঠামো নির্মাণে ত্রুটি দেখা গেছে, যা উদ্বেগের কারণ। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরাখণ্ডে চার ধাম হাইওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকালে একটি সুড়ঙ্গ ধসে পড়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন।

এছাড়াও, মিজোরামে একটি সেতু নির্মাণকালে দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে।

চেনাব রেল সেতু নিঃসন্দেহে একটি বিশাল প্রকৌশলগত সাফল্য। এটি ভারতীয় রেলওয়ের আধুনিকীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কাশ্মীর উপত্যকার মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে এবং এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে, পরিবেশগত প্রভাব এবং নির্মাণ নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলোও বিবেচনা করা জরুরি।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *