বিশ্বের সবচেয়ে জটিল হাতঘড়ি: ভ্যাশেরন কনস্টান্টিনের নতুন সৃষ্টি।
সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত ঘড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ভ্যাশেরন কনস্টান্টিন সম্প্রতি বাজারে এনেছে তাদের নতুন মাস্টারপিস – ‘লে ক্যাবিনোটিয়ার সোলারিয়া আলট্রা গ্র্যান্ড কমপ্লিকেশন’ (Les Cabinotiers Solaria Ultra Grand Complication)। ঘড়িটি শুধু সময়ের হিসাব রাখার যন্ত্র নয়, বরং এটি প্রযুক্তি এবং শিল্পের এক দারুণ সমন্বয়।
ঘড়িটিতে এমন সব বৈশিষ্ট্য যোগ করা হয়েছে যা একে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল হাতঘড়ির স্বীকৃতি দিয়েছে।
এই অত্যাশ্চর্য ঘড়িটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর অসাধারণ কারিগরি দক্ষতা।
ঘড়িটিতে রয়েছে ৪১টি বিশেষ ‘কমপ্লিকেশন’। ‘কমপ্লিকেশন’ বলতে ঘড়ির সময় দেখানোর মৌলিক কাজ, যেমন – ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ডের কাঁটা, এছাড়াও ক্যালেন্ডার এবং চান্দ্র দশার বাইরে ঘড়িতে যোগ করা অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যগুলোকে বোঝায়।
এই ঘড়িটিতে সূর্যের অবস্থান নির্ণয়, ঘণ্টার ধ্বনি, এমনকি নক্ষত্র কখন দৃশ্যমান হবে, সেই তথ্যও প্রদর্শিত হবে।
ঘড়িটির ডিজাইন তৈরিতে এক বছর নয়, লেগেছে পুরো আট বছর।
এর প্রতিটি সূক্ষ্ম অংশ তৈরি করতে দক্ষ কারিগরদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে।
ঘড়িটির ভেতরে রয়েছে ১,৫২১টি আলাদা যন্ত্রাংশ।
ঘড়িটির ডিজাইনও অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
এর কেসটি তৈরি করা হয়েছে ১৮ ক্যারেট সাদা সোনা দিয়ে।
এছাড়াও, ঘড়িটিতে ২০০টির বেশি মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি নীলকান্তমণি ডিস্ক (sapphire discs)।
ঘড়িটির ব্যাস (case diameter) ৪৫ মিলিমিটার (১.৮ ইঞ্চি)।
ভ্যাশেরন কনস্টান্টিনের এই নতুন সৃষ্টি শুধু একটি ঘড়ি নয়, বরং এটি তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রমাণ।
ঘড়িটিতে সময় প্রদর্শনের তিনটি ভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে।
একটি প্রচলিত ২৪ ঘণ্টার দিন, আরেকটি নক্ষত্র সময় (পৃথিবীর নিজস্ব অক্ষের উপর ঘোরার সময়, যা ক্যালেন্ডারের দিনের চেয়ে প্রায় চার মিনিট কম) এবং সৌর দিন, যা পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়েছে।
ঘড়িটির অন্যান্য বিশেষত্বগুলোর মধ্যে রয়েছে সূর্যের অবস্থান, গতিপথ এবং পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলের সাপেক্ষে তার কৌণিক অবস্থান নির্ণয় করার ব্যবস্থা।
এছাড়াও, রাশিচক্রের ১৩টি নক্ষত্রপুঞ্জের একটি ঘূর্ণায়মান ডিসপ্লে রয়েছে, যা আকাশে তারাগুলোর দৃশ্যমানতা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করবে।
ভ্যাশেরন কনস্টান্টিনের এই নতুন ঘড়িটি প্রস্তুত করতে ১৩টি পেটেন্ট-এর জন্য আবেদন করা হয়েছে, যার মধ্যে সাতটি ঘড়িটির ঘণ্টার ধ্বনির সাথে সম্পর্কিত।
গত বছর, ভ্যাশেরন কনস্টান্টিন ‘বার্কলে গ্র্যান্ড কমপ্লিকেশন’ নামে একটি পকেট ঘড়ি তৈরি করেছিল, যেখানে ৬৩টি জটিলতা ছিল।
এই ঘড়িটি তৈরি হয়েছে ‘ওয়াচেস অ্যান্ড ওয়ান্ডার্স’ নামক একটি বাণিজ্য মেলায়, যা সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এই ঘড়ি প্রস্তুত করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, সময় নির্ধারণ, ক্যালেন্ডার, ক্রোনোগ্রাফ এবং ঘণ্টার ধ্বনির মতো প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোকে একটি বেস প্লেটের ওপর নিয়ে আসা এবং জ্যোতির্বিদ্যার সম্পর্কিত কার্যাবলীগুলোকে অতিরিক্ত একটি প্লেটে স্থাপন করা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন