আলাস্কার বিশাল এক অরণ্য: বাংলাদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য র্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াস ন্যাশনাল পার্ক।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি আলাস্কা। বরফের চাদরে মোড়া পাহাড়, সুবিশাল গ্লেসিয়ার, আর জনমানবহীন প্রান্তরের এক অসাধারণ জগৎ হল র্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াস ন্যাশনাল পার্ক ও রিজার্ভ। আমেরিকার বৃহত্তম এই জাতীয় উদ্যানটি যেন এক রূপকথার রাজ্য, যেখানে প্রকৃতির নানা রূপ একসঙ্গে দেখা যায়।
বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য আলাস্কার এই বিস্ময়কর স্থানটি সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো।
র্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াস পার্কের আয়তন শুনলে হয়তো অনেকেই অবাক হবেন। প্রায় ১ কোটি ৩২ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কটি। এর বিশালতা এতটাই যে, এটি ইয়োলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের প্রায় ছয় গুণ বড়!
আলাস্কার অ্যাঙ্করেজ শহর থেকে প্রায় ৩২২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং কানাডার ইউকন সীমান্তের কাছাকাছি এর অবস্থান।
এই পার্কে পৌঁছানোও একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা। সাধারণত, ছোট আকারের বিমানে (Bush plane) চড়ে অথবা দুর্গম রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে এখানে যেতে হয়। এখানকার দৃশ্যগুলি এতটাই মনোমুগ্ধকর যে, যাত্রাপথের প্রতিটি মুহূর্তও যেন একটি অ্যাডভেঞ্চার।
র্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াসে ঘোরার জন্য কয়েকটি প্রধান স্থান রয়েছে। উত্তরাংশে নাবেসনা জেলা, যেখানে পায়ে হেঁটে ঘোরার জন্য অনেক পথ এবং ক্যাম্পিং করার সুযোগ আছে। দক্ষিণের কেনিকট জেলা পর্যটকদের মধ্যে বেশি পরিচিত।
এখানে পুরনো দিনের পরিত্যক্ত খনি শহর, ঐতিহাসিক স্থান, এবং ট্রেকিং-এর পথ বিদ্যমান।
কেনিকট জেলার কাছে অবস্থিত ম্যাকার্থি শহরটি যেন পুরনো দিনের একটি স্মৃতিচিহ্ন। এখানে ছোট ছোট হোটেল, রেস্টুরেন্ট, এবং সাধারণ দোকান রয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
এখানে থাকাকালীন আপনি রুট গ্লেসিয়ারে ক্যাম্পিংয়েরও সুযোগ পাবেন।
এই পার্কে ভ্রমণের সেরা সময় হল গ্রীষ্মকাল, অর্থাৎ মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এই সময়ে আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা খোলা থাকে।
দিনের বেলা এখানে সূর্যের আলো থাকে, যা রাতের বেলাতেও দেখা যায়। যারা একটু নির্জনতা ভালোবাসেন, তাদের জন্য জুলাই-আগস্ট মাস উপযুক্ত।
শীতকালে এখানকার রাস্তাগুলো বরফে ঢেকে যায়, তবে যারা দুঃসাহসী, তারা শীতের পোশাকে সজ্জিত হয়ে এখানে স্কিইং অথবা স্নোশুয়িংয়ের মতো কার্যকলাপ করতে পারেন।
র্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াসে ঘোরার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। এটি ভালুকের এলাকা, তাই বন্যপ্রাণী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে বাঁচতে মশা তাড়ানোর স্প্রে সাথে নিতে পারেন।
এখানে ভ্রমণের সময় আপনি বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। ট্রেকিং এবং ব্যাকপ্যাকিংয়ের জন্য এখানে অসংখ্য পথ রয়েছে।
রুট গ্লেসিয়ারে ক্যাম্পিং করা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা দিতে পারে। কেনিকট খনির আশেপাশে ঘুরে অতীতের কপার খনির ইতিহাস সম্পর্কেও জানা যায়।
গ্লেসিয়ারের উপরে ওঠা অথবা রাফটিংয়ের মতো কার্যকলাপও এখানে উপভোগ করা যায়।
আলাস্কার এই র্যাঙ্গেল-সেন্ট ইলিয়াস ন্যাশনাল পার্ক বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটি স্বপ্নের গন্তব্য হতে পারে। তবে, এখানে ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে, এর বিশালতা, দুর্গম পথ এবং খরচের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
সম্ভবত, এটি অনেকের জন্যই একটি ব্যয়বহুল ভ্রমণ হতে পারে। এই পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পেলে, তা নিঃসন্দেহে একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হবে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure