চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে শি জিনপিং।
চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করতে এই অঞ্চলে সফর শুরু করেছেন। এই সফরে তার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করা।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শি জিনপিং সোমবার ভিয়েতনামে তার সফর শুরু করবেন। এরপর তিনি মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া যাবেন। চীনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সফর ‘গুরুত্বপূর্ণ’।
ধারণা করা হচ্ছে, চীন এই সফরের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল অংশীদার হিসেবে নিজেদের তুলে ধরবে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্যনির্ভর দেশগুলোর জন্য এটি একটি উদ্বেগের কারণ।
ভিয়েতনামের মতো উৎপাদন-ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ এবং কম্বোডিয়ার মতো পোশাক ও পাদুকা শিল্পের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা গেছে, ভিয়েতনামের ওপর ৪৬ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ার ওপর ৪৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন সম্ভবত ভিয়েতনামের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক উন্নত করাসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ এবং সহযোগিতা সংক্রান্ত ডজনখানেক চুক্তি স্বাক্ষর করবে।
এই পরিস্থিতিতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের ১৫০ শতাংশ শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন তাদের ভুলগুলো শুধরে নেয় এবং পারস্পরিক শুল্কের ভুল নীতি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে।”
এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শি জিনপিং-এর এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং একটি নিয়ম-ভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি চীনের সমর্থন জানানো।
এর মাধ্যমে চীন বিশ্বে নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে।
ভিয়েতনামের জন্য এই সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশটি একদিকে যেমন চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজার এবং চীনের প্রভাবের মোকাবিলায় নিরাপত্তা সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
এই অঞ্চলের দেশগুলোতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্কের কারণে চীন থেকে সস্তা পণ্য আমদানি বেড়ে যেতে পারে, যা স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ভিয়েতনামসহ এই অঞ্চলের অনেক দেশই এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কোনো পক্ষ নিতে চাইছে না।
তারা উভয় পক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।
ভিয়েতনামের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করছেন। তারা দেশটির আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন এবং মার্কিন পণ্য, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এছাড়া, ভিয়েতনাম তাদের ভূখণ্ড থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া চীনা পণ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে চাইছে।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে ভিয়েতনাম বেশ লাভবান হয়েছিল। কারণ অনেক কোম্পানি চীন থেকে ভিয়েতনামে ব্যবসা সরিয়ে নিয়েছিল।
কিন্তু এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভিয়েতনামের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১২৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়, যা দেশটির জন্য উদ্বেগের কারণ।
কম্বোডিয়া এবং মালয়েশিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কম্বোডিয়ার পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করতে পারে, যেখানে প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। কম্বোডিয়া এক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ দেশটির জিডিপির ২৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি করে।
শি জিনপিং এর এই সফরকে বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চীনের একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এর আগে, চীনের প্রেসিডেন্ট ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গেও সম্পর্ক গভীর করার অঙ্গীকার করেছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান