চীনের চোখে চোখ: তিব্বতে জিনপিংয়ের বিরল সফর, উত্তেজনা তুঙ্গে!

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের তিব্বত সফর: আসন্ন দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে টানাপোড়েন।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি তিব্বত সফর করেছেন। এই সফরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে জল্পনা চলছে, কারণ সেখানে দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

তিব্বতে চীনের কর্তৃত্ব সুসংহত করা এবং বিতর্কিত অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব আরও দৃঢ় করতেই এই সফর বলে মনে করা হচ্ছে।

তিব্বতের রাজধানী লহাসায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠার ৬০ বছর উদযাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিহিত স্থানীয় তিব্বতিরা নাচ পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি ছিল তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সাধারণত শীর্ষস্থানীয় নেতারা এমন অনুষ্ঠানে যোগ দেন না।

পোটলা প্রাসাদের সামনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। সেখানে শি জিনপিংয়ের বিশাল ছবি প্রদর্শন করা হয়।

এই প্রাসাদ একসময় দালাই লামাদের শীতকালীন আবাসস্থল ছিল, যারা শত শত বছর ধরে তিব্বতের আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে শাসন করেছেন। ১৯৫৯ সালে চীনের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর বর্তমান দালাই লামা নির্বাসনে যান।

শি জিনপিং তার বক্তব্যে তিব্বতের স্থিতিশীলতা, জাতিগত ঐক্য এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, তিব্বতের উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

একইসঙ্গে, তিনি তিব্বতের স্থানীয় কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো, যেমন – ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিচুয়ান-তিব্বত রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এদিকে, তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁর পরবর্তী পুনর্জন্ম চীনের বাইরে ‘মুক্ত বিশ্বে’ হবে এবং তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর অফিসের হাতেই থাকবে।

দালাই লামার এই ঘোষণার মাধ্যমে চীন সরকারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। চীন সরকার মনে করে, দালাই লামা একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং তিব্বতের অস্থিরতার জন্য দায়ী।

বর্তমানে নির্বাসনে থাকা দালাই লামা ৯০ বছর বয়সে উপনীত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন এবং তিব্বতের মানুষের কাছে গভীর শ্রদ্ধার পাত্র।

তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে চীন ও দালাই লামার মধ্যেকার এই বিরোধ ভবিষ্যতে আরও জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনের বিষয়টি শুধুমাত্র তিব্বতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

এই পরিস্থিতিতে, চীন সরকার কীভাবে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখে এবং তিব্বতের ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *