ঐক্যবদ্ধ চীন-রাশিয়া-কিমের সামরিক শক্তি: বিশ্বকে বার্তা!

চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শনে বেইজিং-এ একত্রিত হলেন পুতিন ও কিম: আন্তর্জাতিক সম্পর্কে নতুন সমীকরণ?

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর নেতৃত্বে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ। বুধবারের এই আয়োজনে যোগ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই কুচকাওয়াজ ছিলো চীন সরকারের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের এক গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়া হয়েছে।

ঐতিহাসিক এই কুচকাওয়াজে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও সুশৃঙ্খল সৈন্য সমাবেশ ছিলো বিশেষভাবে লক্ষণীয়। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, সবই প্রদর্শিত হয় এই অনুষ্ঠানে। চীনের সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণের প্রতি প্রেসিডেন্ট শি-এর বিশেষ মনোযোগের বিষয়টিও এখানে স্পষ্ট হয়। বিগত কয়েক বছরে চীনের সামরিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পেছনে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর অস্ত্র তৈরি এবং সামরিক খাতে বিপুল বিনিয়োগ।

কুচকাওয়াজে পুতিন ও কিম জং-উনের উপস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক বর্তমানে উত্তেজনাপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে, শীর্ষ নেতাদের এক মঞ্চে উপস্থিতি, তাদের মধ্যেকার পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ইঙ্গিত, যেখানে পশ্চিমা প্রভাব কমে আসছে এবং চীন, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের ক্ষমতা বাড়ছে।

তবে, এই সামরিক কুচকাওয়াজের তাৎপর্য শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শনে সীমাবদ্ধ নয়। এর মাধ্যমে চীনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন জানানোরও চেষ্টা করা হয়েছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দীর্ঘদিন ধরে দেশের ক্ষমতা ধরে রেখেছে এবং শি জিনপিং-এর নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ সেই লক্ষ্যেরই অংশ।

অন্যদিকে, এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে আসে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বের ক্ষমতা কাঠামোতে পরিবর্তন আসছে, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের উচিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দেশের স্বার্থ রক্ষা করা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনের এই সামরিক শক্তি প্রদর্শনের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হতে পারে। তবে, এই জোট কতটুকু টেকসই হবে, তা এখনই বলা কঠিন। বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলো এখনো প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইরানের প্রেসিডেন্টের এই কুচকাওয়াজে যোগ দেওয়াটাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তবে, বিশ্লেষকরা এটাও মনে করেন যে, এই ধরনের জোটবদ্ধতা এখনই পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সরাসরি কোনো হুমকি নয়। বরং, এটি একটি প্রতীকী বার্তা, যা বিশ্বকে নতুন বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *