আতঙ্কে ইয়েলের অধ্যাপকগণ: ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ফিরতে বলছেন শিক্ষার্থীদের!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। ইয়েল ল স্কুলের অধ্যাপকগণ এই মর্মে একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন, যা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই নিষেধাজ্ঞা বহু দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিতে পারে।

অধ্যাপক মুনীর আহমেদ এবং মাইকেল উইশনি তাঁদের ইমেইলে সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার অথবা আপাতত যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁদের মতে, যদিও সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেনি, তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে যে, সম্ভবত ২০১৭ সালের মতো এবারও কিছু দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।

খবর অনুযায়ী, নতুন এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪৩টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ বিধিনিষেধ আরোপ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১১টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এই তালিকাটিতে রয়েছে আফগানিস্তান, ভুটান, কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন।

এছাড়াও, দ্বিতীয় স্তরে ভিসা বিধিনিষেধের সম্মুখীন হতে পারে এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বেলারুশ, পাকিস্তান, রাশিয়া ও হাইতি। তৃতীয় স্তরের ২১টি দেশের মধ্যে বেশিরভাগই আফ্রিকার দেশ, যাদের নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণ উল্লেখ করে ৬০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হতে পারে।

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সতর্কবার্তায় শুধু নির্দিষ্ট দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের প্রতিই নয়, বরং সকল বিদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের প্রতি বিশেষ নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। সীমান্ত কর্মকর্তারা ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন এবং তাঁদের উত্তরের ভিত্তিতে ভিসা বাতিলও হতে পারে।

এই উদ্বেগের কারণ হিসেবে আরও জানা যায় যে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর কারণ, ট্রাম্পের আগের মেয়াদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা।

গত ২০শে জানুয়ারি, ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যেখানে পররাষ্ট্র দপ্তরকে এমন দেশ চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে যেগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। ২১শে মার্চের মধ্যে এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও কিডনি বিশেষজ্ঞ ড. রেশা আলাউয়েহকে লেবাননে ফেরত পাঠানো হয়, যদিও আদালতের নির্দেশে তাঁর বহিষ্কার সাময়িকভাবে স্থগিত ছিল। একইভাবে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্নাতকোত্তর ছাত্র মাহমুদ খলিলকে তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীর সামনেই আটক করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্ক কাউন্সিল (Council on American-Islamic Relations) ইতোমধ্যে একটি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী, সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারে এমন দেশগুলোর নাগরিকদের আগামী ৩০ দিনের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *