যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি?

**ইয়েমেনে কি মার্কিন সমর্থন চাইছে হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিপক্ষরা?**

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির দেশ ইয়েমেনে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ আবারও নতুন মোড় নিতে পারে। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র হুতি বিদ্রোহীদের অবস্থানে বিমান হামলা জোরদার করার পর, দেশটির সরকারপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

২০১৪ সালে হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ চলছে। এরপর সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট সরকারপন্থীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে।

যদিও, গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ প্রায় থমকে ছিল।

তবে, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। বিশেষ করে, লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর হুদাইদার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য সরকারপন্থী গোষ্ঠীগুলো নতুন করে তৎপরতা শুরু করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, হুদাইদাতে অভিযান চালানো হলে তা মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

কারণ, এই বন্দরটি খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী প্রবেশের প্রধান পথ। যদিও, হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সরকারপন্থী দলগুলোর সামরিক সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের উদাহরণ টেনে কেউ কেউ এই অভিযানের সম্ভাবনা দেখছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক হানা পোর্টার আল জাজিরাকে জানান, “সরকারপন্থী বিভিন্ন কণ্ঠস্বর হুদাইদা এবং অন্যান্য স্থানে হুতিদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালানোর কথা বলছে।

আমার ধারণা, এর মূল উদ্দেশ্য হল যুক্তরাষ্ট্র অথবা সৌদি আরবের কাছ থেকে সমর্থন আদায় করা.”

২০২২ সালের মার্চে সৌদি আরব ইয়েমেনে তাদের সামরিক অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেয়।

এরপর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়।

বর্তমানে হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ উত্তর-পশ্চিম ইয়েমেনের বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।

অন্যদিকে, সরকারপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর এডেন এবং দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।

এই পরিস্থিতিতে, হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংযুক্ত জাহাজে হামলার ঘটনা বৃদ্ধি করেছে।

এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বিমান হামলা চালাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতিতে হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিপক্ষ দলগুলো নতুন করে সুযোগ খুঁজছে।

বিশেষজ্ঞ নিক ব্রুমফিল্ড আল জাজিরাকে জানান, “গাজা সংকট শুরুর পর থেকেই আমরা দেখছি, বিভিন্ন হুতি বিরোধী দল যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে।

এক্ষেত্রে, ইয়েমেন সরকার এবং সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এসটিসি) উভয়ই নিজেদেরকে হুতিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে.”

ইয়েমেন সরকারের প্রধান লক্ষ্য হল হুতিদের পরাজিত করে দেশটির বিরুদ্ধে তাদের ‘অভ্যুত্থান’ সমাপ্ত করা।

এপ্রিলের শুরুতে প্রেসিডেন্ট রিশাদ আল-আলিমি ‘অভ্যুত্থান’কে রুখতে জাতীয় ঐক্যের উপর জোর দেন এবং ‘মুক্তির লড়াই’-এর চূড়ান্ত মুহূর্ত আসন্ন বলে মন্তব্য করেন।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে হুতি বিরোধী স্থল অভিযান চালানোর বিষয়ে আলোচনা চলছে।

তবে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ভিত্তিহীন খবর।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন পর্যন্ত হুতি বিরোধী দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি।

সৌদি আরব এবং ইউএই-এর যুদ্ধ থেকে দূরে থাকার কারণে তাদের পক্ষে হুতিদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে নামা কঠিন হবে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *