ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা গত কয়েক সপ্তাহে প্রায় সাতটি মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এসব ড্রোনের মোট মূল্য প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি বাংলাদেশী টাকা)।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য এটি একটি বড় ধরনের ক্ষতি, যা তাদের কার্যক্রমের ওপর একটি গুরুতর আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সামরিক সূত্রগুলো বলছে, গত ৩১শে মার্চ থেকে ২২শে এপ্রিলের মধ্যে এই ড্রোনগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। হুতি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের আকাশে মার্কিন বিমানগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা জোরদার করেছে।
কেবল গত এক সপ্তাহেই তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে, যা তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি নির্দেশ করে। প্রতিটি ড্রোনের মূল্য ছিল প্রায় ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এগুলো হয় নজরদারির কাজে নিয়োজিত ছিল, না হয় হামলা চালানোর মিশনে অংশ নিচ্ছিল।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে গত ১৫ই মার্চ থেকে হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে। এর ফলে বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ডেভ ইস্টবার্ন জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী এ পর্যন্ত ৮০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে সামরিক কমান্ড সেন্টার, অস্ত্রাগার এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত।
তবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ড্রোন হারানোর ঘটনাগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো সম্ভবত বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের ফল।
হুতি বিদ্রোহীরা মূলত ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এর কারণ হলো গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান।
হুতিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসরায়েল যদি যুদ্ধ বন্ধ করে তবে তারা হামলা চালানো বন্ধ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক অভিযানের কারণে বাড়ছে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা এয়ারওয়ার্স-এর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসে মার্কিন হামলায় ২৭ থেকে ৫৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
এপ্রিল মাসে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, সম্প্রতি হোদাইদার রাস ইসা বন্দরে চালানো এক হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত এবং ১৫০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
ইয়েমেনের রাজধানী সানায় সোমবারের হামলায় নিহত হয়েছে ১২ জন এবং আহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অভিযানের মানবিক দিক নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন, এলিজাবেথ ওয়ারেন এবং টিম কেইন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেজেথকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, প্রশাসন বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমাতে তাদের দায়িত্ব পালন করছে কিনা।
বিশেষ করে রাস ইসা বন্দরে বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পর তাদের এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা