যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে উত্তেজনা বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। হুতি বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ এবং ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে, ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থানে বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
হুতিদের গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বুধবার সাদাহ ও আমরান প্রদেশে অন্তত ১৭টি বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তারা এই হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে।
হুতিদের আনসারুল্লাহ্ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো ‘আক্রমণাত্মক বিমান হামলা’ চালিয়েছে, যার ফলে জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর তারা জানায়নি।
আল মাসিরাহ্ টিভি জানায়, সাদাহ’র পূর্বাংশ এবং আল সালেম জেলায় কয়েকটি হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া, উত্তর-পশ্চিম আমরান প্রদেশের সুফিয়ান জেলায় দুটি হামলা হয়।
মঙ্গলবার রাতে সাদাহ’র পশ্চিমে সাহার জেলার ওপরও পাঁচটি হামলা চালায় মার্কিন যুদ্ধবিমান।
এর জবাবে, হুতি বিদ্রোহীরা জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে বুধবার এক বিবৃতিতে জানান, তারা লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান যুদ্ধজাহাজে এবং তেল আবিবে ইসরায়েলি সামরিক অবস্থানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলেছে।’ হুতিরা ‘মার্কিন আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং ‘escalation-এর জবাব escaltion দিয়ে দেবে।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। তারা ইয়েমেনের জলসীমায় ইসরায়েলি নৌযান চলাচলে বাধা দিচ্ছে এবং গাজায় অবরোধ তুলে না নেওয়া পর্যন্ত তারা এই ধরনের অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র গত ১৫ই মার্চ থেকে ইয়েমেনে হামলা চালাচ্ছে, যার ফলে অন্তত ৫৩ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, হুতিরা গত বছর লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছিল এবং গাজায় হামাসের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।
২০২৩ সালের শেষের দিক থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর হুতিরা ১০০টির বেশি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, তারা ইসরায়েল ও তাদের মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালাচ্ছে, যা গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সংহতি প্রকাশ করে।
জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরা তাদের হামলা স্থগিত করেছিল। তবে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর তারা আবার হামলা শুরুর হুমকি দেয়।
সানায় থেকে আল জাজিরার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আল-আত্তাব জানান, ‘মার্কিন বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে, এবং এর জবাবে হুতিরা পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে। অনেক ইয়েমেনবাসীর জন্য পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
২০১৫ সাল থেকে চলা যুদ্ধে প্রায় ২ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে এবং প্রায় ৭০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও অনেক ইয়েমেনি গাজার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তারা মনে করে, তাদের ত্যাগ ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে এবং অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য করবে। তাদের কাছে, ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি জানানো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার জন্য তারা কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত, এমনকি তাদের দেশ যখন যুক্তরাষ্ট্রের লাগাতার হামলার শিকার হচ্ছে তখনও।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা