শিরোনাম: মাদাগাস্কারে ইয়িংকা শোনিবারের আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিল্প প্রদর্শনী: উপনিবেশিকতা ও সংস্কৃতির মিশেলে এক নতুন দিগন্ত
শিল্পকলার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ব্রিটিশ-নাইজেরিয়ান শিল্পী ইয়িংকা শোনিবারের প্রথম বড় একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো মাদাগাস্কারে।
আফ্রিকার এই দ্বীপরাষ্ট্রে, বিশেষ করে আন্তানানারিভোর ‘ফন্ডেশন এইচ’ গ্যালারিতে শিল্পীর কাজগুলো দর্শকদের মন জয় করেছে।
শোনিবারের শিল্পকর্ম, যা একদিকে যেমন ঔপনিবেশিকতার স্মৃতি বহন করে, তেমনই সংস্কৃতির এক মিশ্র রূপ ফুটিয়ে তোলে, তা বিশ্বজুড়ে শিল্পপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
ফন্ডেশন এইচ, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি মালগাসি আর্ট ফাউন্ডেশন।
এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো আধুনিক শিল্পকলার প্রতি স্থানীয় মানুষের আগ্রহ তৈরি করা এবং তরুণ শিল্পীদের জন্য একটি উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
এখানে প্রতি মাসে প্রায় ১৫,০০০ দর্শক আসেন, যাদের মধ্যে সিংহভাগই মাদাগাস্কারের বাসিন্দা এবং তাদের মধ্যে ২৫ বছরের কম বয়সীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এটি যেকোনো আর্ট ইনস্টিটিউশনের জন্যই ঈর্ষণীয়।
শোনিবারের প্রদর্শনীতে তাঁর বিখ্যাত ‘আফ্রিকান লাইব্রেরি’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
এই বিশাল সংগ্রহশালায় প্রায় ৬,০০০ বই রয়েছে, যেগুলোতে আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক এবং বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পী ও ক্রীড়াবিদদের নাম খোদাই করা হয়েছে।
এই লাইব্রেরি, আফ্রিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে শেখায় এবং একইসঙ্গে আফ্রিকান সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
শোনিবারের কাজে ব্যবহৃত একটি বিশেষ উপাদান হলো ‘আঙ্কারা প্রিন্ট’ বা মোমের কাপড়ের ব্যবহার।
এই কাপড়গুলো মূলত ইন্দোনেশীয় সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত এবং ডাচরা তৈরি করে আফ্রিকার বাজারে বিক্রি করত।
শোনibar বলেন, এই কাপড়গুলো তাঁর কাছে সংস্কৃতির সংমিশ্রণ এবং পরিচয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।
তাঁর মতে, এই কাপড়ের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের গভীরতা ফুটিয়ে তোলেন।
শিল্পীর প্রদর্শনীতে ‘আফ্রিকান বার্ড ম্যাজিক’ সিরিজের একটি চিত্রকর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
যেখানে দুটি পাখির সঙ্গে ১৬ শতাব্দীর বেনিন সাম্রাজ্যের প্রথম রানী ইদিয়ার একটি মুখোশ রয়েছে।
এই সিরিজে শিল্পী পরিবেশের অবনতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে আফ্রিকানদের সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরেছেন।
ইদিয়া মাস্ক, যা একসময় ব্রিটিশ সেনারা বেনিন থেকে লুট করে নিয়ে গিয়েছিল, সেই লুন্ঠিত সংস্কৃতির পুনরুদ্ধারও তাঁর কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
শোনিবারের শিল্পকর্ম শুধু নান্দনিকতাই প্রকাশ করে না, বরং রাজনৈতিক ভাষ্যও বহন করে।
তাঁর ‘ডিকলোনাইজড স্ট্রাকচারস’ নামক ইনস্টলেশনে কুইন ভিক্টোরিয়া, আর্ল কিচেনার এবং উইনস্টন চার্চিলের মূর্তিগুলোকে আফ্রিকান মোমের কাপড়ে আবৃত করা হয়েছে।
এই কাজের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দেশের শাসকদের প্রতি তাঁর নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেছেন।
শোনিবার শুধু শিল্পী নন, তিনি অন্যদেরও শিল্পী হতে উৎসাহিত করেন।
নাইজেরিয়ায় তাঁর ‘গেস্ট আর্টিস্ট স্পেস’ (জিএএস) ফাউন্ডেশনটি আফ্রিকান শিল্পীদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
এই ফাউন্ডেশনটি নতুন শিল্পীদের সুযোগ করে দেয় এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে।
ইয়িংকা শোনিবায়ের এই প্রদর্শনী আফ্রিকার শিল্পকলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
তাঁর কাজগুলো শুধু শিল্পকলার একটি অংশ নয়, বরং আফ্রিকার সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।
এটি ঔপনিবেশিকতার স্মৃতিচারণ, সংস্কৃতির মিশ্রণ এবং শিল্পকলার মাধ্যমে পরিবর্তনের বার্তা দেয়।
তথ্য সূত্র: The Guardian