দ্রুত উত্থান, দ্রুত পতন: ইয়ুন সুক-ইওলের জীবনের অজানা গল্প!

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে এক সময়ের উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন ইউন সুক-ইওল। মাত্র এক বছর আগেও যিনি ছিলেন একজন সাধারণ আইনজীবী, তিনিই দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশটির রাষ্ট্রপতির আসনে আরোহণ করেন।

তবে তার পতন ছিল আরও দ্রুত। ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যেই অভূতপূর্ব এক ঘটনার জন্ম দেন তিনি, যখন সামরিক আইন জারির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন।

এর ফলস্বরূপ, দেশটির সাংবিধানিক আদালত তাকে পদ থেকে অপসারণ করে।

৬৪ বছর বয়সী ইউন সুক-ইওলের এই উত্থান-পতনের পেছনে ছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ। একসময়ের প্রভাবশালী কৌঁসুলি হিসেবে পরিচিত ইউন, তার স্পষ্টবাদী এবং কঠোর নেতৃত্বের জন্য পরিচিত ছিলেন।

কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই তিনি অসহযোগিতার সম্মুখীন হন। সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল বিরোধী দলের হাতে, যারা ইউন-এর বিভিন্ন নীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিশংসন করতে সক্রিয় ছিল।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে, ইউন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে কাজ করেন। তিনি হোয়াইট হাউসে এক নৈশভোজে গান গেয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনকে মুগ্ধ করেছিলেন।

তবে দেশের অভ্যন্তরে তার শাসনকালে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ইউন-এর প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনেছিল। এমনকি, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন কেলেঙ্কারিও তার ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

যুক্তি হিসেবে ইউন বলেছিলেন, বিরোধী দলের “রাষ্ট্রবিরোধী” কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তিনি সামরিক আইন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও সমালোচকরা মনে করেন, এর মূল উদ্দেশ্য ছিল আইনসভার ওপর তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।

ডেমোক্রেটিক পার্টি ইউন-এর এই পদক্ষেপকে “স্বৈরাচারী” এবং “বিদ্রোহী” আখ্যা দিয়েছিল।

ইউনের পতনের পেছনে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগও একটি বড় কারণ ছিল। জানা যায়, তার স্ত্রী কিম কিয়ন-হীর বিরুদ্ধে উপহার হিসেবে বিলাসবহুল ব্যাগ গ্রহণ এবং শেয়ার বাজারে কারসাজির মতো অভিযোগ ছিল।

এই বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত করতে বিরোধী দল চাপ দিলেও ইউন তাতে রাজি হননি।

আইনজীবী জীবন থেকে রাজনীতির ময়দানে আসা ইউন সুক-ইওলের এই সংক্ষিপ্ত এবং নাটকীয় রাজনৈতিক জীবন দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার ক্ষমতা গ্রহণ এবং দ্রুত পতন দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *