যুক্তরাষ্ট্রের ইয়োসেমাইট জাতীয় উদ্যানে একজন ট্রান্সজেন্ডার অধিকার কর্মী কর্তৃক পতাকা উত্তোলনের ঘটনার জেরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পার্কের একজন রেঞ্জারকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং কর্তৃপক্ষের ধারণা, প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এই ঘটনায় বাকস্বাধীনতা ও পার্কের নীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
জানা যায়, শ্যানন ‘এসজে’ জোসলিন নামের ওই রেঞ্জার গত ২০শে মে এল ক্যাপিটান পর্বতে একটি বিশাল ট্রান্সজেন্ডার প্রাইড পতাকা উত্তোলন করেন। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পতাকাটি সেখানে উড়তে থাকে। পরে তিনি স্বেচ্ছায় সেটি নামিয়ে ফেলেন।
এরপরেই তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর্মীর ‘গ্রহণযোগ্য আচরণ প্রদর্শনে ব্যর্থতার’ কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
জোসলিন জানান, তিনি এই কাজটি করেছিলেন কারণ বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক ছিল। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে এবং অন্যদের জানাতে চেয়েছিলে যে জাতীয় উদ্যানে সকলে নিরাপদ। তবে তার বরখাস্তের ঘটনা ভিন্ন বার্তা দেয়।
জোসলিনের মতে, “যদি কোনো ফেডারেল কর্মীর এমন কোনো পরিচয় থাকে যা বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তবে তাকে হয় চুপ থাকতে হবে, নয়তো কর্মচ্যুত হতে হবে।”
এই ঘটনার পরে, পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরো কিছু কর্মী এবং প্রতিবাদকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হতে পারে।
কর্তৃপক্ষের মতে, বিক্ষোভ প্রদর্শনের ওপর নতুন করে যে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা ভাঙার কারণেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পার্কের কর্মকর্তাদের দাবি, ইয়োসেমাইটের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা এবং দর্শকদের অভিজ্ঞতা অক্ষুণ্ণ রাখতেই এই নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাদের মতে, এই ধরনের নিয়ম লঙ্ঘনের ঘটনা তারা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবেন না।
এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে এল ক্যাপিটানে একটি উল্টানো মার্কিন পতাকা প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছিল, যা তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু নীতির প্রতিবাদ ছিল।
এদিকে, জোসলিনের সমর্থনে অনেকে মুখ খুলেছেন। পরিবেশবিদ এবং ড্র্যাগ কুইন পাটি গনিয়া এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, জোসলিনের বরখাস্ত অন্যায়। তিনি আরও বলেন, ট্রান্সজেন্ডার হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়।
জোসলিনকে সমর্থন করে ‘সেভ আওয়ার পার্কস’ নামক একটি সংগঠনের জেসন ও’নিল বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য হলো, কর্মীদের তাদের মতামত প্রকাশে ভয় দেখানো।
অন্যদিকে, পার্কের কর্মকর্তারা বলছেন, এল ক্যাপিটানে অননুমোদিত বিক্ষোভের বিষয়ে তারা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছেন। তারা আরও জানান, অনেক পার্কে ‘প্রথম সংশোধনী এলাকা’ চিহ্নিত করা আছে, যেখানে ২৫ জনের কম লোক অনুমতি ছাড়াই প্রতিবাদ করতে পারেন। ইয়োসেমাইটেও এমন কিছু এলাকা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে, প্রথম সংশোধনী জনগণের বাকস্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের অধিকারকে সুরক্ষা দেয়। তবে এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, পার্ক কর্তৃপক্ষের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেকের মতে, এই ধরনের ঘটনা মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন