শিরোনাম: যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেট দলে নতুন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ, পুরনো নেতাদের ভবিষ্যৎ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরে এখন পরিবর্তনের ঢেউ। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে আসন্ন নির্বাচনে দলের দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রার্থীরা। তাদের মূল অভিযোগ, বর্তমান নেতারা ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির মোকাবিলায় যথেষ্ট সক্রিয় নন।
এই পরিবর্তনের হাওয়া কিভাবে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
ইন্ডিয়ানার সপ্তম কংগ্রেসনাল জেলার উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝা যেতে পারে। সেখানে ৩৫ বছর বয়সী জর্জ হর্নেডো, ২০০৮ সাল থেকে নির্বাচিত হওয়া পঞ্চাশোর্ধ কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ড্রে কারসনের বিরুদ্ধে লড়ছেন। হর্নেডোর মতে, ডেমোক্রেটিক পার্টি জাতীয় ও স্থানীয় উভয় পর্যায়েই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না।
এলাকার কিছু ভোটারও তার কথায় সমর্থন জানাচ্ছেন। ৬৯ বছর বয়সী মারিয়া ল্যাংস্টন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কারসনের সমর্থক, বলেছেন তিনি হর্নেডোকে ভোট দিতে প্রস্তুত। তিনি মনে করেন, কারসনের এলাকায় আরও সক্রিয় হওয়া উচিত এবং ডেমোক্রেটিক পার্টিকে শক্তিশালী করতে আরও বেশি ভূমিকা রাখা দরকার।
শুধু ইন্ডিয়ানা নয়, এই পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে আরও অনেক রাজ্যে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩৭ বছর বয়সী জেক রাভাক তার সাবেক বস, ১৫ বারের কংগ্রেস সদস্য ব্র্যাড শেরম্যানের বিরুদ্ধে লড়ছেন। ইলিনয়েস-এ, ২৬ বছর বয়সী সোশ্যাল মিডিয়া তারকা ক্যাট আবুঘাজালেহ, যিনি রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটদের দুর্বলতা নিয়ে অসন্তুষ্ট, তিনি ৮০ বছর বয়সী জ্যান শ্যাকোওস্কির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মিশিগানেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে ডেট্রয়েটের ৭০ বছর বয়সী শ্রী থানেদারের বিরুদ্ধে লড়ছেন ৩২ বছর বয়সী ডোনোভান ম্যাককিন্নি।
এই তরুণ প্রার্থীদের উত্থানের পেছনে রয়েছে ডেমোক্রেটদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দুর্বলতা নিয়ে অসন্তোষ। তারা মনে করেন, দলের পুরনো নেতৃত্ব এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এই পরিবর্তনের ডাক দেওয়া নেতাদের অনেকেই মনে করেন, দলের মধ্যে নতুন উদ্যম এবং আধুনিক চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন।
এই পরিবর্তনের হাওয়াকে আরও বেগবান করতে এগিয়ে এসেছে ‘লিডার্স উই ডিজার্ভ’ (Leaders We Deserve) নামের একটি সংগঠন। তারা প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে তরুণ প্রার্থীদের সমর্থন জোগাচ্ছে। এছাড়া, নিউইয়র্কের আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের মতো প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে পরিচিত ‘জাস্টিস ডেমোক্রেটস’ও (Justice Democrats) আসন্ন নির্বাচনে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে।
তবে, এই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন পুরনো নেতারা। তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলছেন, দলের ঐক্য ধরে রাখতে এবং জনগণের জন্য কাজ করতে তাদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব প্রয়োজন। ব্র্যাড শেরম্যানের মতে, ডেমোক্রেটরা ভালো কাজ করছে এবং এখনই পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে, তরুণ প্রার্থীরা মনে করেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে আরও সক্রিয় হতে হবে। তাদের মতে, পুরোনো পদ্ধতিতে কাজ করলে দলের ক্ষতি হতে পারে। তারা চান, কংগ্রেসে এমন প্রতিনিধি আসুক যারা জনগণের কথা শুনবেন এবং তাদের জন্য কাজ করবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চ্যালেঞ্জগুলো ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্ব একদিকে যেমন দলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে, তেমনি নতুন নেতৃত্বের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আগামী নির্বাচনে তরুণ প্রার্থীদের জয় হয় কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন