ইউটিউব: ২০ বছরের যাত্রায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিছু ভিডিও
আজ থেকে বিশ বছর আগে, অনলাইন জগতে ভিডিও দেখার ধারণাটি এতটা জনপ্রিয় ছিল না। কিন্তু ইউটিউব আসার পর, ভিডিও দেখা যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে, বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো এই ইউটিউব, যেখানে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটায়। আসুন, ইউটিউবের এই দীর্ঘ পথচলার কিছু উল্লেখযোগ্য ভিডিওর কথা জানি, যা কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছে।
শুরুর গল্প:
২০০৫ সালে, ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিম “মি অ্যাট দ্য চিড়িয়াখানা” শিরোনামের একটি ভিডিও আপলোড করেন। এটি ছিল ১৯ সেকেন্ডের একটি ক্লিপ, যেখানে তিনি সান দিয়েগো চিড়িয়াখানায় একটি হাতির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
এই ভিডিওটি ছিল ইউটিউবের প্রথম আপলোড করা ভিডিও, যা প্ল্যাটফর্মটির সূচনার সাক্ষী।
ভাইরাল হওয়ার পথে:
২০০৬ সালে “ইভোলিউশন অফ ডান্স” ভিডিওটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এতে একজন লোক বিভিন্ন ধরনের নাচের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।
এরপর, ২০০৭ সালে “চার্লি বিট মাই ফিঙ্গার” নামের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে দুই ভাইয়ের মধ্যে একটি মজার ঘটনা দেখানো হয়।
ভিডিওটি এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে, এটি ইউটিউবের ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
সঙ্গীতের জয়জয়কার:
ইউটিউবে মিউজিক ভিডিওর জনপ্রিয়তাও কম নয়। ২০০৮ সালে মুক্তি পাওয়া “সৌলজা বয় টেল’এম – ক্র্যাঙ্ক দ্যাট” গানটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে, কারণ এর সাথে ছিল একটি বিশেষ নাচের কৌশল।
এরপর, ২০১০ সালে “বেড ইনট্রুডার সং!!!” তুমুল জনপ্রিয়তা পায়, যেখানে একটি ঘটনার অডিও ব্যবহার করে গান তৈরি করা হয়েছিল।
২০১১ সালে, রেবেকা ব্ল্যাকের “ফ্রাইডে” গানটি মুক্তি পাওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনার শিকার হলেও, এটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।
আলোচিত কিছু গান:
২০১২ সালে, কোরিয়ান শিল্পী সাই-এর “গ্যাংনাম স্টাইল” ইউটিউবে মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। গানটির আকর্ষণীয় সুর এবং মজাদার দৃশ্য ধারণের কারণে এটি প্রথম ভিডিও হিসেবে এক বিলিয়নের বেশি ভিউ অর্জন করে।
২০১৩ সালে, সাই “জেন্টলম্যান” নিয়ে হাজির হন, তবে আগের মতো জনপ্রিয়তা পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালে লুইস ফনসি এবং ড্যাডি ইয়াঙ্কির “দেসপাসিতো” গানটি মুক্তি পায়, যা এখনো পর্যন্ত ইউটিউবের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভিউ হওয়া ভিডিও। গানটির আকর্ষণীয় দৃশ্য এবং কথার কারণে এটি দ্রুত সবার মাঝে ছড়িয়ে পরে।
অন্যান্য ভাইরাল ভিডিও:
২০১৪ সালে “মিউট্যান্ট জায়ান্ট স্পাইডার ডগ” নামের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যেখানে একটি কুকুরকে মাকড়সার পোশাকে দেখা যায়।
এছাড়া, ২০১৫ সালে “ক্রেজি প্লাস্টিক বল প্র্যাঙ্ক!!” নামের একটি ভিডিও তৈরি করা হয়, যেখানে একটি ঘরে বলের সমুদ্র তৈরি করা হয়েছিল।
২০১৬ সালে, “এডেল কারপুল কারাওকে” বেশ জনপ্রিয়তা পায়, যেখানে জেমস কর্ডেন তার শোতে বিখ্যাত শিল্পীদের গান পরিবেশন করতে উৎসাহিত করেন।
২০১৯ সালে, “লিভারপুল বনাম বার্সেলোনা (৪-০), এপিক কামব্যাক কমপ্লিটেড অ্যাট অ্যানফিল্ড” শিরোনামের একটি খেলার ভিডিও ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।
শিশুদের পছন্দের জগৎ:
২০২০ সালে “বেবি শার্ক ডান্স” ভিডিওটি মুক্তি পায়, যা শিশুদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বর্তমানে এটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিও।
২০২১ সালে, “আই স্পেন্ট ৫০ আওয়ার্স বেরিড এলাইভ” নামের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, ইউটিউবার মিস্টারবিস্ট।
সাম্প্রতিক সময়ের ভিডিও:
২০২২ সালে, মাইনক্রাফট ইউটিউবার টেকনোব্লেডের মৃত্যুর পর তার বাবার একটি আবেগপূর্ণ ভিডিও প্রকাশিত হয়, যা ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে।
২০২৩ সালে, “গ্র্যান্ড থেফট অটো VI ট্রেইলার ১” মুক্তি পাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিওর রেকর্ড গড়ে।
এছাড়াও, শর্টস ভিডিওর যুগে, বিভিন্ন ধরনের ছোট ভিডিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
ইউটিউবের এই দীর্ঘ পথচলায়, বিভিন্ন ধরনের ভিডিও যেমন মানুষের মন জয় করেছে, তেমনি ইউটিউবও সময়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তন এনেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান