জম্মু ও কাশ্মীর: এক শোকাবহ ফুটবল দুর্ঘটনা এবং ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
নব্বইয়ের দশকে জাম্বিয়ার ফুটবল দল ছিল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। খেলোয়াড়দেরুণ ছিল দুর্দান্ত, এবং তাদের স্বপ্ন ছিল বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করা। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল, কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে সব কিছু যেন ওলট-পালট হয়ে গেল।
১৯৯৩ সালের ২৭শে এপ্রিল, জাম্বিয়ার জাতীয় ফুটবল দল একটি বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। গ্যাবনের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে দলের ১৮ জন খেলোয়াড়সহ বিমানের সবাই নিহত হন। পুরো জাতি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছিল।
“চিপোলোপো” (তাম্র বুলেট) নামে পরিচিত এই দলটি আফ্রিকার ফুটবল বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছিল, তাদের অকাল প্রয়াণে যেন একটি সোনালী প্রজন্মের স্বপ্নভঙ্গ হলো।
আসলে, দলটির সেনেগালের সাথে একটি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই ঘটে যায় এই মর্মান্তিক ঘটনা। বিমানটি ঘন ঘন জ্বালানি ভরার জন্য বিভিন্ন স্থানে থামছিল, যা সম্ভবত দুর্ঘটনার একটি কারণ ছিল।
বিমানটি গ্যাবনের আকাশসীমায় প্রবেশের কিছুক্ষণ পরেই বিধ্বস্ত হয়।
এই দুর্ঘটনার পর পুরো জাম্বিয়া যেন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা তখন ভালো ছিল না, তাই ফুটবল দলের সাফল্য ছিল তাদের কাছে এক বিরাট অনুপ্রেরণা। খেলোয়াড়দের মৃত্যু যেন সেই আশা-ভরসার আলো নিভিয়ে দিয়েছিল।
দুর্ঘটনার কয়েকদিন পর, নিহতদের দেহাবশেষ এবং বিমানের ধ্বংসাবশেষ গ্যাবনের উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়। তাদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকার ইন্ডিপেন্ডেন্স স্টেডিয়ামের কাছে ‘হিরোস’ অ্যাকরে তাদের সমাধিস্থ করা হয়।
দুর্ঘটনার কয়েক বছর পর, সাংবাদিক ও লেখক জে ময়াম্বা এই শোকাবহ ঘটনা নিয়ে একটি বই লেখেন, যেখানে তিনি দলের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প তুলে ধরেছেন। খেলোয়াড়দের শোক কাটিয়ে উঠে নতুন করে দল গঠনের প্রক্রিয়াটি ছিল অত্যন্ত কঠিন।
কিন্তু শোককে শক্তিতে পরিণত করে জাম্বিয়ার ফুটবল ফেডারেশন নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। কালুশা বাওয়ালিয়া, যিনি সেসময় নেদারল্যান্ডসের একটি ক্লাবে খেলতেন, তিনি দলের নেতৃত্ব দিতে রাজি হন। এরপর শুরু হয় নতুন খেলোয়াড় বাছাইয়ের প্রক্রিয়া।
আশ্চর্যজনকভাবে, নতুন দলটি খুব দ্রুতই নিজেদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলে। দুর্ঘটনার মাত্র ১০ সপ্তাহ পরেই তারা মরক্কোকে ২-১ গোলে পরাজিত করে। যদিও তারা ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, তবে তাদের লড়াই ছিল প্রশংসার যোগ্য।
১৯৯৪ সালের আফ্রিকা কাপ অব নেশন্সে (এএফকন) দলটি ফাইনালে পৌঁছেছিল, কিন্তু নাইজেরিয়ার কাছে তারা ২-১ গোলে হেরে যায়। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর পর, ২০১২ সালে আবার তাদের সামনে আসে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ।
২০১২ সালের এএফকন টুর্নামেন্টে জাম্বিয়াকে কেউ ফেভারিট হিসেবে ধরেনি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তারা ফাইনালে পৌঁছায়, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল আইভরি কোস্ট। মজার বিষয় হলো, ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল গ্যাবনে, যেখানে সেই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
ফাইনালের আগে, দলটি বিধ্বস্ত বিমানের কাছাকাছি একটি স্থানে ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এরপর তারা আইভরি কোস্টকে টাইব্রেকারে হারিয়ে তাদের প্রথম এএফকন শিরোপা জেতে। যেন নিয়তি তাদের জন্য এই বিজয় লিখে রেখেছিল।
সেই জয়ের পর, কোচ হার্ভে রেনার্ড বলেছিলেন, “আমরা চেয়েছিলাম প্রয়াত খেলোয়াড়দের সম্মান জানাতে। সেই কারণেই আমরা শক্তিশালী হয়েছিলাম।”
আজও জাম্বিয়ার মানুষ সেই শোকাবহ দিনের কথা স্মরণ করে। তাদের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন এখনও টিকে আছে। বর্তমানে, তারা ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
তাদের সামনে ২০২৩ বিশ্বকাপের প্লে-অফে খেলার সুযোগ রয়েছে।
যদি তারা বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তবে সম্ভবত এটি আবারও নিয়তির এক বিশেষ ইঙ্গিত হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন