শিরোনাম: হাস্যকর গবেষণা, অভিনব পুরস্কার: ইগ নোবেল জয়ীদের কীর্তি।
প্রতি বছর, বিজ্ঞান ও গবেষণার জগতে এমন কিছু কাজ হয় যা একদিকে যেমন হাসির উদ্রেক করে, তেমনই নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। এই ধরনের উদ্ভাবনী এবং কৌতুকপূর্ণ গবেষণাকে সম্মান জানাতে প্রতি বছর দেওয়া হয় ইগ নোবেল পুরস্কার।
সম্প্রতি বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে বসেছিল এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
এবারের পুরস্কার বিজয়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জাপানের একদল গবেষক, যারা গরুর গায়ে জেব্রার মতো ডোরাকাটা দাগ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন, মশা তাড়ানো যায় কিনা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ডোরাকাটা দাগের কারণে গরুর শরীরে মাছি কম বসে।
যদিও বৃহৎ পরিসরে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও সম্মানিত হয়েছেন এমন কিছু গবেষক, যারা অদ্ভুত সব বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন, যারা মদের সঙ্গে বিদেশি ভাষা বলার সম্পর্কের ওপর গবেষণা করেছেন। ইউরোপের এই গবেষক দল আবিষ্কার করেছেন, অ্যালকোহল সেবনে কারও কারও বিদেশি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা বাড়ে!
এছাড়াও, নখের বৃদ্ধি নিয়ে কয়েক দশক ধরে গবেষণা করা এক জনকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে হাস্যরসের পাশাপাশি ছিল গবেষণার গভীরতা। ইগ নোবেল পুরস্কারের আয়োজক ‘অ্যানালস অফ ইমপ্রোবাবেল রিসার্চ’-এর সম্পাদক মার্ক আব্রাহামস জানান, “প্রথম দর্শনে যে কোনও অসাধারণ আবিষ্কারকে হয়তো হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু এই পুরস্কার সেই সব আবিষ্কারকে উদযাপন করে, কারণ প্রথম নজরে কে আর বলতে পারে, কোনটা আসলে মূল্যবান?”
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আরও দেখা গেছে, যারা বাথরুমের কমোডে বসে স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এছাড়াও, পুরস্কৃত হয়েছেন তাঁরা, যারা দুর্গন্ধযুক্ত জুতার কারণে একটি জুতার তাকে জুতা রাখার অভিজ্ঞতার ওপর গবেষণা করেছেন।
একইসঙ্গে, টেফলন খেলে খাবারের পরিমাণ বাড়ে কিনা, তা নিয়ে গবেষণা করা একটি দলও সম্মানিত হয়েছে। এমনকি, অ্যালকোহল পান করা বাদুড়ের ওড়ার ক্ষমতার ওপর এর প্রভাব নিয়েও গবেষণা করা হয়েছে।
কলম্বিয়ার এক গবেষক ফ্রান্সিসকো সানচেজ জানান, “এটা আমাদের জন্য বিশাল সম্মানের। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, বিজ্ঞানীরা সবসময় গম্ভীর প্রকৃতির হন না, বরং মজাদার গবেষণা করতেও তাঁদের জুড়ি নেই।” সানচেজের দল গবেষণা করে দেখেছেন, বাদুড়েরা পচা ফল খেতে পছন্দ করে না, যাতে অ্যালকোহলের পরিমাণ বেশি থাকে।
বাধ্য হয়ে খেলে তাদের ওড়ার ক্ষমতা কমে যায়।
অনুষ্ঠানে ইতালির একদল গবেষক পাস্তার সসের ভৌত বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে পুরস্কার জিতেছেন। পুরস্কার গ্রহণ করতে আসা এক গবেষক শেফের পোশাক পরেছিলেন, সঙ্গে ছিল নকল গোঁফ।
সবশেষে, তাঁরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে পাস্তার বাটি তুলে দেন।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস