ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ভ্যাটিকানে পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় হওয়া কথোপকথনটিকে দুই নেতার ‘সেরা’ আলোচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি। তিনি জানান, ওই সংক্ষিপ্ত বৈঠকে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার সম্পর্ক, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের সময় এই আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়। এমন একটা সময়ে এই বৈঠকটি হয়, যখন ইউক্রেন-আমেরিকা সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, এমন একটা আশঙ্কা ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে দেওয়া সমর্থন কমাতে পারে এবং শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসতে পারে।
বৈঠকটি ইতিবাচক ছিল বলে উভয় পক্ষই মত প্রকাশ করেছে। এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওভাল অফিসের বৈঠকটি ভালো ফল দেয়নি। এরপর ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের শান্তি স্থাপনের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যা ইঙ্গিত করে যে তিনি রুশ নেতার প্রতি ধৈর্য হারাচ্ছেন।
জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি বিশ্বাস করি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের আগের আলোচনাগুলোর মধ্যে এটিই ছিল সেরা। আলোচনাটি সংক্ষিপ্ত হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
জেলেনস্কি জানান, তাঁরা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। ট্রাম্পের মন্তব্যকে তিনি ‘খুব জোরালো’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে তিনি তাঁর আকাঙ্ক্ষার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ট্রাম্পকে আমেরিকান অস্ত্র কেনার সুযোগ তৈরির বিষয়ে আশা প্রকাশ করেছেন।
জেলেনস্কি বলেন, “আমি তাঁকে অস্ত্রের পরিমাণ সম্পর্কে বলেছি এবং তিনি বলেছেন যে তাঁরা বিষয়টি বিবেচনা করবেন, কারণ এগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায় না।”
আলোচনায় তাঁরা একটি ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিকে ‘প্রথম পদক্ষেপ’ হিসেবে বিবেচনা করতে রাজি হয়েছেন বলেও জানান জেলেনস্কি।
অন্যদিকে, সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই বিষয়ে জেলেনস্কি জানান, ভ্যাটিকানে তাঁদের বৈঠকের ফলেই এই চুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার এই দাবিকে তিনি মিথ্যা প্রমাণ করতে পেরেছেন যে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আসতে রাজি নয়। জেলেনস্কি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে ভ্যাটিকানে আমাদের বৈঠকের পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করেছেন।”
ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেনকো জানান, এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্র এই তহবিলে নতুন সামরিক সহায়তা দিতে পারে।
অন্যদিকে, জেলেনস্কি গত মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের প্রস্তাবিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতিকে সমালোচনা করেছেন। পুতিন প্রস্তাব করেছিলেন, ৮ মে মধ্যরাত থেকে ১১ মে মধ্যরাত পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে।
প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির তারিখগুলো রাশিয়ার ৯ মে-এর বিজয় দিবস উদযাপনের সঙ্গে মিলে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হওয়া ২ কোটি ৫০ লাখেরও বেশি সোভিয়েত সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকের স্মরণে এই দিনটি পালন করা হয়।
জেলেনস্কি বলেন, “৯ মে পুতিনের একাকীত্ব ঘোচানোর জন্য আমরা কোনো ধরনের খেলা খেলব না।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন