ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: মৃত সৈনিকদের বিনিময়ে রাশিয়ার ‘অব্যবস্থাপনা’ নিয়ে প্রশ্ন জেলেনস্কির
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে সম্প্রতি মৃত রুশ সেনাদের দেহ ফিরিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অন্তত ২০ জন রুশ সেনার দেহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার মাধ্যমে রাশিয়া তাদের সৈন্যদের প্রতি কেমন আচরণ করে, সেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
খবর সূত্রে জানা গেছে মৃতদেহগুলোর মধ্যে একজন ইসরায়েলি নাগরিকও ছিলেন।
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জেলেনস্কি এই মন্তব্য করেন। তবে শনিবার পর্যন্ত তাঁর এই বক্তব্য প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল।
মৃতদেহগুলোর পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
জেলেনস্কি বলেন, “তারা তাদের দেশের নাগরিকদের মৃতদেহগুলো আমাদের দিকে ছুড়ে মেরেছে।
যুদ্ধ এবং সৈন্যদের প্রতি তাদের এই মনোভাব অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমাদের কাছে এর প্রমাণ রয়েছে। কিছু মৃতদেহের সঙ্গে রুশ পাসপোর্টও পাওয়া গেছে।”
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, মৃত সবাই ইউক্রেনীয়।
সংবাদমাধ্যমের সামনে মৃত ২০ জন রুশ সেনার মধ্যে একজনের পাসপোর্ট ও আইডি কার্ড দেখানো হয়। নথি অনুযায়ী, ওই ব্যক্তি মস্কো অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন।
ইস্তাম্বুলে হওয়া শান্তি আলোচনার মাধ্যমে মৃত ও আহত সৈন্যদের এই বিনিময়ই ছিল একমাত্র দৃশ্যমান ফল।
জুন মাসে দুই পক্ষই ৬ হাজার করে সৈন্যের দেহ বিনিময়ের বিষয়ে রাজি হয়েছিল। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এত বেশি সংখ্যক দেহ পরীক্ষা করার জন্য তাদের যথেষ্ট সময় নেই।
এছাড়াও মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করাটাও কঠিন হয়ে পড়বে।
জেলেনস্কি মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মন জয় করতে এবং আরও নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য রাশিয়া হয়তো শান্তি আলোচনার ভান করছে।
তাঁর মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্ভবত এখনো বিশ্বাস করেন যে তিনি এই যুদ্ধে জয়ী হবেন।
তাই, ইস্তাম্বুলে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উচিত কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ইউক্রেনের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাব:
ইরানের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সহযোগিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জেলেনস্কি বলেন, “ইরান আমাদের সৈন্যদের মারার জন্য রাশিয়াকে সবকিছু দিয়েছে—ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং লাইসেন্স।
তাদের উৎপাদন ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়াটা আমাদের জন্য ভালো।
তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো এটা অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও রাশিয়ার সামরিক সহযোগিতা রয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা:
জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইরানের তৈরি ‘শায়েদ’ ড্রোন ব্যবহার করছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ‘ওরেশনিক’ নামের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে।
তিনি জানান, এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত ৩৯টি রুশ কোম্পানির মধ্যে ২১টির ওপর এখনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
তাঁর মতে, অবিলম্বে এই কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।
ইউক্রেনের অস্ত্র উৎপাদন:
ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা স্থানীয়ভাবে ‘শায়েদ’ ড্রোন ধ্বংস করার জন্য ইন্টারসেপ্টর তৈরি করতে শুরু করেছে।
জার্মানির কাছ থেকে এই অস্ত্র তৈরির জন্য অর্থ সাহায্যও চাওয়া হচ্ছে।
জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের কাছে তাঁদের জিডিপির ০.২৫% ইউক্রেনের স্থানীয় প্রতিরক্ষা খাতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ন্যাটো সম্মেলন ও ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা:
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি সম্ভবত চলতি সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দেবেন।
তবে সোমবার তিনি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি আরও জানান, ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া свиরিডেনকো এবং প্রেসিডেন্টের অফিসের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টের কাছে অস্ত্র কেনার একটি তালিকা জমা দিয়েছেন।
আগামী বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জেলেনস্কি মনে করেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করা এবং পুতিনের ওপর বিশ্বজুড়ে আরও চাপ সৃষ্টি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস