যুদ্ধবিরতি নিয়ে পুতিনের ‘খেলা’, কড়া জবাব জেলেনস্কির!

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রস্তাবিত স্বল্পকালীন যুদ্ধবিরতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি এই প্রস্তাবকে ‘খেলা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

রাশিয়ার বিজয় দিবস উপলক্ষে মস্কো যে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে চেয়েছিল, জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জেলেনস্কি বলেন, “আসলে এটা তাঁর (পুতিন) তরফ থেকে একটা নাটক মঞ্চস্থ করার মতো। কারণ, দুই-তিন দিনের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়।”

রাশিয়া ৮ই মে থেকে ৭২ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছিল।

কিন্তু ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হলেও রাশিয়া তা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।

জেলেনস্কি বলেছেন, ৯ই মে রাশিয়ার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া বিদেশি নেতাদের জন্য “একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্যে পুতিনের এই খেলা”–তে ইউক্রেন অংশ নেবে না।

জেলেনস্কি রাশিয়ার এই ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে ‘গুরুত্বহীন’ বলেও মন্তব্য করেন। তিনি জানান, কিয়েভ বরং যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত।

বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ান ফেডারেশনের ভূখণ্ডে কী ঘটবে, তার দায় আমরা নিতে পারি না।

তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাঁদেরই। তাই আমরা কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারব না।”

জবাবে রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ টেলিগ্রামে এক বার্তায় জেলেনস্কিকে যুদ্ধের প্রবীণদের নিরাপত্তা হুমকির দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন।

তিনি বলেন, জেলেনস্কির এই বক্তব্য সরাসরি হুমকি স্বরূপ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, পুতিনের এই প্রস্তাব ছিল “শান্তির জন্য ইউক্রেনের প্রস্তুতি যাচাইয়ের একটি পরীক্ষা”।

তিনি আরও বলেন, “আমরা অবশ্যই দ্ব্যর্থহীন নয়, বরং সুনির্দিষ্ট বিবৃতি এবং সবার আগে এই সংঘাত নিরসনের উদ্দেশ্যে পদক্ষেপ আশা করছি।”

এদিকে, গত সপ্তাহে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার সময় জেলেনস্কি ইউক্রেনকে দেওয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল খুবই জোরালো, এমনটাই জানান জেলেনস্কি। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করেননি।

জেলেনস্কি আরও জানান, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি উভয় দেশের জন্যই লাভজনক।

এই চুক্তির ফলে ইউক্রেন ভবিষ্যতে মার্কিন বিনিয়োগ রক্ষার পাশাপাশি নিজেদের ভূখণ্ড ও জনগণের সুরক্ষায় আরও বেশি সক্ষম হবে।

এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের নতুন খনিজ প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার পাবে এবং দেশটির পুনর্গঠনে বিনিয়োগ করতে পারবে।

ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা ইয়ারোস্লাভ জেলি present করা হয়েছে জানান, ৮ই মে পার্লামেন্টে এই চুক্তি অনুমোদনের জন্য ভোট হবে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে আলোচনার প্রস্তুতি চলছে এবং সম্ভবত ইউক্রেনেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, “ওয়াশিংটনে সম্প্রতি কিছু পরিবর্তন সত্ত্বেও, এমন একটি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া ইতিবাচক।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু সদস্য এখনো সন্দিহান।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ “শীঘ্রই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই”।

ভ্যান্স যোগ করেন, “তাদের একটি চুক্তিতে আসতে হবে এবং এই নৃশংস সংঘাত বন্ধ করতে হবে।

এটি সহজে থামবে না।”

যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চললেও, মাঠের অবস্থা এখনো ভয়াবহ।

শুক্রবার রাতে রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের ১২টি স্থানে আঘাত হানে।

এতে কমপক্ষে ৪৭ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

খারকিভের মেয়র ইগর তেরেকভ এবং আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনেহুবভ জানিয়েছেন, আবাসিক ভবন ও বেসামরিক অবকাঠামো এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল।

ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার ছোড়া ১৮৩টি ড্রোন এর মধ্যে ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে এবং আরও ৭৩টিকে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে অকার্যকর করা হয়েছে।

রাশিয়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ১৭০টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে এবং বেশ কয়েকটি ক্রুজ ও গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করেছে।

এছাড়া, রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের কৃষ্ণ সাগর বন্দর নভোরোসিয়স্কে ড্রোন হামলায় চারজন আহত হয়েছে বলে ক্রাসনোদার অঞ্চলের গভর্নর ভেনিয়ামিন কন্দ্রাতিয়েভ জানিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *