যুদ্ধবিরতি নিয়ে তুরস্কের মাটিতে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে রাজি ইউক্রেন ও রাশিয়া?
ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের উদ্দেশ্যে তুরস্কের মাটিতে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।
খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
রবিবার এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, তিনি সোমবার থেকে যুদ্ধবিরতি চান এবং তুরস্কের মাটিতে পুতিনের জন্য অপেক্ষা করবেন।
এর আগে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে অবিলম্বে শান্তি আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানান।
পুতিনের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব আসার পর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, “অন্তত তারা একটি সমঝোতা হতে পারে কিনা, সেটি যাচাই করতে পারবে।
যদি তা সম্ভব না হয়, তবে ইউরোপীয় নেতা ও যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারবে বিষয়টি কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে।” ট্রাম্প আরও বলেন, “আলোচনা এখনই হওয়া উচিত!!!”
অন্যদিকে, ইউক্রেন এবং তাদের মিত্র দেশগুলো সোমবার থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে।
এই প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্জ এবং পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক শনিবার কিয়েভে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানান।
তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, পুতিন যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ না করেন, তবে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
তবে, রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ পুতিনের প্রস্তাবকে “খুবই গুরুতর” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, এটি “সংঘাতের মূল কারণগুলো দূর করার” এবং “শান্তিপূর্ণ সমাধানের বাস্তব অভিপ্রায়” প্রমাণ করে।
পুতিন রবিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
এরদোয়ান এই আলোচনার জন্য তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন এবং বৈঠক আয়োজনে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রবিবার রাতে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে বলেন, তিনি এখনও সোমবার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
তিনি রাশিয়ার কাছ থেকে এ বিষয়ে “স্পষ্ট উত্তর” চান।
জেলেনস্কি আরও জানান, পশ্চিমা মিত্রদের প্রতিক্রিয়ার দিকেও তিনি তাকিয়ে আছেন, যারা শনিবার পুতিন যুদ্ধবিরতি না মানলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের মধ্যেই রাশিয়া রবিবার ভোরে ইউক্রেনে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ৬টি দিক থেকে ১০৮টি ড্রোন ও সিমুলেটর ড্রোন পাঠিয়েছে।
তাদের মধ্যে ৬০টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে এবং ৪১টি সিমুলেটর ড্রোন ইউক্রেনের প্রতিরোধের কারণে লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত তিন দিনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেন ১৪,০০০ বারের বেশি যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
যদিও ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতিকে স্বীকৃতি দেয়নি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস