যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ জেলেনস্কি! ট্রাম্পের সাথে বৈঠকের পর কি ফল?

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সোমবার ওয়াশিংটনে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সম্প্রতি আলাস্কায় অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া শীর্ষ বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে কোনো সমাধানে পৌঁছানো যায়নি।

খবরটি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি। আলাস্কার বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প জানান, যুদ্ধ বন্ধের জন্য যুদ্ধবিরতির চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তিই ভালো উপায়।

পুতিনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ট্রাম্পের এমন মন্তব্যে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। কারণ, এর আগে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছিল।

বৈঠকে যোগ দিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি জানান, সোমবারের বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

এর আগে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে জেলেনস্কিকে ‘অসম্মানজনক’ বলার জন্য ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল।

অন্যদিকে, ট্রাম্প শনিবার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউসে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রাম্প জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।

আলাস্কার সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত জানাননি ট্রাম্প। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার ওপর ‘গুরুতর পরিণতি’ নেমে আসবে, যদি পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি না হন।

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তা প্রয়োজন। তিনি জানান, ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার পর জেলেনস্কি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। সব মিলিয়ে আলোচনা প্রায় ৯০ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলেছে।

ট্রাম্পের মতে, ইউক্রেন সমস্যার সমাধানে জেলেনস্কি ও ইউরোপের দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে। তিনি জানান, সমস্যা সমাধানে ইউরোপের দেশগুলোরও কিছু ভূমিকা থাকবে।

এদিকে, ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্প ও জেলেনস্কির সঙ্গে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন, জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমার, ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব, পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তারা এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, ইউক্রেনের জন্য ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ থাকতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি সেই নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত থাকে, তবে তারা স্বাগত জানাবেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইউক্রেনকে তার ভূখণ্ডের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত কোনোভাবেই জোর করে পরিবর্তন করা যাবে না। তবে, সম্মেলনে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কাল্লাস বলেছেন, রাশিয়া যে সহজে যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছে না, এটিই এখন কঠিন বাস্তবতা। তিনি উল্লেখ করেন, দুই দেশের প্রতিনিধি দলের বৈঠকের মধ্যেই রাশিয়া ইউক্রেনে নতুন করে হামলা চালিয়েছে।

চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা বলেন, আলাস্কার শীর্ষ সম্মেলন প্রমাণ করেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা শান্তির পথ খুঁজছে, কিন্তু পুতিন এখনো শুধু চান ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখল করতে এবং সোভিয়েত সাম্রাজ্য পুনর্গঠন করতে।

বর্তমানে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ১,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে যুদ্ধ চলছে। চলতি বসন্তে রুশ সেনারা তাদের অগ্রযাত্রা আরও জোরদার করেছে। যুদ্ধের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়া সবচেয়ে বেশি ভূখণ্ড দখল করেছে।

লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক পরিচালক নেইল মেলভিন বলেন, পুতিন আলাস্কা সম্মেলনে এসেছিলেন মূলত রাশিয়ার ওপর থেকে যুদ্ধ বন্ধের চাপ কমানোর জন্য। তিনি মনে করবেন, এই সম্মেলনের ফল তাঁর জন্য ইতিবাচক।

জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর মতে, শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সমাধান করা যেতে পারে।

তবে রাশিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উসাকভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনার সময় ট্রাম্প, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি।

জেলেনস্কি এক টুইটে জানান, ত্রিপক্ষীয় বৈঠক না হলে অথবা রাশিয়া যদি যুদ্ধের সুষ্ঠু সমাধানে রাজি না হয়, তাহলে নিষেধাজ্ঞাকে আরও শক্তিশালী করা উচিত।

অন্যদিকে, রুশ কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমগুলো সম্মেলনের ফলকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তাঁদের মতে, এই বৈঠক পশ্চিমা বিশ্বে পুতিনের একাকীত্ব ঘুচিয়েছে।

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপ-প্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ আলাস্কার শীর্ষ সম্মেলনকে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি আলোচনার পরিবেশকে ‘শান্তিপূর্ণ, কোনো হুমকি বা আলটিমেটাম ছাড়াই’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ৮৫টি শাহেদ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ৬১টি ভূপাতিত করা হয়েছে।

সুমি, দিনিপ্রোপেট্রোভস্ক, দোনেৎস্ক ও চেরনিহিভ অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা অধিকৃত ক্রিমিয়া এবং আজভ সাগরে ২৯টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

তথ্য সূত্র: এপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *