জিম্বাবুয়ে: রোডেশিয়ার ধাঁচে শাসনের অবসান চায় জনতা!

জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও অস্থিরতা মাথাচাড়া দিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট এমারসন ম্যানাগাগওয়াকে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা এবং ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ (ZANU-PF) দলের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সেখানে তীব্র বিতর্ক চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন দেশটির স্বাধীনতা যুদ্ধের এক প্রবীণ যোদ্ধা ব্লেসড গেজা। প্রেসিডেন্ট ম্যানাগাগওয়ার পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর তিনি ইউটিউবে এক ভিডিও বার্তায় ম্যানাগাগওয়া এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনেন।

গেজা “জভিগানান্দা” নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। “জভিগানান্দা” বলতে তিনি বুঝিয়েছেন, যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে দেশের সম্পদ লুট করছে।

গেজার অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন সরকারের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, দলের প্রভাবশালী সদস্য এবং সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত কয়েকজন ধনী ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে স্কট সাকুপওয়ানি, উইকনেল চিভায়ো এবং কুদা তাগওয়াইরীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

স্থানীয় গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চিভায়ো ২০১৮ সালের নির্বাচনে কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত মূল্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি এই অর্থের একটি অংশ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন।

কুদা তাগওয়াইরীর বিরুদ্ধেও রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা যায়, তিনি জটিল ব্যবসায়িক কাঠামো এবং সরকারের বিশেষ সুবিধা ব্যবহার করে বিশাল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী টেন্ডাই বিটি’র মতে, তাগওয়াইরীর হাতে দেশটির জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রণ, ৬০ শতাংশ স্বর্ণখনি এবং দুটি বৃহৎ ব্যাংকসহ একমাত্র স্বর্ণ পরিশোধনাগারের মালিকানা রয়েছে।

চিভায়ো এবং তাগওয়াইরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ম্যানাগাগওয়া এবং জানু-পিএফ দলের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারি চুক্তি বাগিয়ে নিয়েছেন এবং নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করেছেন। গেজা সম্প্রতি তাগওয়াইরীর এবং চিভায়োর অফিসের বাইরে কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দায় স্বীকার করেছেন।

তার মতে, তিনি “জভিগানান্দা” এবং ম্যানাগাগওয়ার সঙ্গে জড়িত “রাজনৈতিক অপরাধীদের” বিরুদ্ধে বিপ্লবী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রেসিডেন্ট ম্যানাগাগওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন। যদিও তিনি প্রকাশ্যে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কনস্টানটিনো চিওয়েঙ্গার সঙ্গে তার ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে।

ধারণা করা হচ্ছে, চিওয়েঙ্গা সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ম্যানাগাগওয়ার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছেন। এই পরিস্থিতিতে দেশটিতে আবারও সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জিম্বাবুয়ের বর্তমান পরিস্থিতি রোডেশিয়ার (Rhodesia) শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়। রোডেশিয়া ছিল শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুদের একটি রাষ্ট্র, যেখানে নাগরিক অধিকার এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের শাসনকে দমন করা হতো। বর্তমান জিম্বাবুয়ের সরকারও ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতে আইন ও সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধুমাত্র ম্যানাগাগওয়াকে সরিয়ে চিওয়েঙ্গাকে ক্ষমতায় বসালে দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কারণ, দুর্নীতির বিস্তার দলটির গভীরে প্রোথিত। তারা মনে করেন, জিম্বাবুয়েকে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে হলে একটি ব্যাপক ও গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রয়োজন, যা সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *