২৫ বছর পর শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, জিম্বাবুয়েতে চাঞ্চল্য!

জিম্বাবুয়েতে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়েছে, যা দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের ভূমি দখলের ২৫ বছর পর নেওয়া একটি পদক্ষেপ।

বুধবার দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে ৩৭৮ জন কৃষককে প্রায় ৩.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

২০০০ সাল থেকে মুগাবের সরকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়া শুরু করে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভূমি পুনর্বণ্টন করা।

এই পদক্ষেপের ফলে একসময় দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসে। কৃষকদের কাছ থেকে জমি কেড়ে নেওয়ার ফলে দেশটির কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়, যা রপ্তানির ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছিল।

এর ফলস্বরূপ, ২০০৮ সালে জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিতে চরম মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, যা ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন শতাংশ।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্ষতিপূরণের জন্য মোট ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে।

প্রথম কিস্তির অর্থ পরিশোধের পর, অবশিষ্ট অর্থ দুই থেকে ১০ বছর মেয়াদী মার্কিন ডলার-ভিত্তিক ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে, যেখানে সুদের হার ২ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।

তবে, অর্থনীতিবিদদের একাংশ এই পদ্ধতির সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, বন্ডের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়াটা উপযুক্ত নয়।

জিম্বাবুয়ের অর্থমন্ত্রী এমথুলি এনকুব বলেছেন, “আমরা এই ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যাব, আমরা এ বিষয়ে খুবই সিরিয়াস।

ভূমি পুনরুদ্ধার কর্মসূচির নামে মুগাবের সরকার মূলত শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের থেকে ৪,০০০ এর বেশি খামার বাজেয়াপ্ত করে।

স্থানীয় একটি সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রায় ১৪ মিলিয়ন হেক্টর জমির প্রায় ৪০ শতাংশ মুগাবে এবং তার সহযোগীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন।

বর্তমানে জিম্বাবুয়ে ঋণ পরিশোধে বেশ সমস্যা সম্মুখীন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে তারা ঋণ নিতে পারছে না।

কারণ, তারা ২০০০ ও ২০০১ সাল থেকে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। গত বছরের শেষ দিকে দেশটির ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার অর্ধেক ছিল বকেয়া ও জরিমানা।

আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের মতে, জিম্বাবুয়েকে ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে হলে, ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি অন্যতম শর্ত।

এর মাধ্যমে আইএমএফের নতুন কর্মসূচি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

তবে, জিম্বাবুয়ের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষতিপূরণ প্রদানের এই প্রক্রিয়াটি একটি লোক দেখানো পদক্ষেপ।

কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইএমএফ প্রোগ্রামের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, জিম্বাবুয়েতে সুশাসন ও অর্থনৈতিক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা বহুপাক্ষিক অর্থায়নে সহায়তা করতে পারবে না।

এই ক্ষতিপূরণ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী কমার্শিয়াল ফার্মার্সের ইউনিয়নের প্রধান অ্যান্ড্রু প্যাসকোর মতে, যদিও এই চুক্তিটি নিখুঁত নয়, তবুও কৃষকদের জন্য এটি ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *