চাকরি বাঁচাতে ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলা: সরকারি কর্মীদের নতুন জীবন!

জিম্বাবুয়ের সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান এখন নিম্নগামী। একদিকে মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে সীমিত বেতন—এই দুইয়ের চাপে পড়ে অনেক সরকারি কর্মচারীই এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য বেছে নিচ্ছেন ভিন্ন পথ।

দিনের বেলায় সরকারি চাকরি করার পর, রাতের অন্ধকারে তারা রাস্তায় ব্যবসা করছেন।

হারারের বাসিন্দা ডুমিসানি ন্গারা (ছদ্মনাম) তাদেরই একজন। তিনি জাতীয় আবাসন ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন।

সকালে অফিসে যাওয়ার আগে তিনি যেমন পরিপাটি পোশাকে সেজেগুজে যান, তেমনই বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই পাল্টে ফেলেন তার বেশ। অফিসের পোশাক বদলে তিনি পরে নেন টি-শার্ট আর ট্রাউজার।

এরপর শহরের কেন্দ্রস্থলে তার ছেলের সঙ্গে মিলে শুরু করেন মুদিখানার ব্যবসা।

সরকারি কর্মীদের অন্য কোনো কাজ করার অনুমতি নেই, কিন্তু ন্গারার মতে, শুধু সরকারি বেতনে সংসার চালানো কঠিন। তিনি জানান, ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই কাজ করছেন।

২০১৯ সালে যখন মূল্যস্ফীতি ৩০০ শতাংশে পৌঁছায়, তখন তার বেতন কমে যায়। ঘরভাড়া এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে তার পরিবারকে নতুন উপায় খুঁজতে হয়।

তার স্ত্রী বাড়িতে ফল ও সবজি বিক্রি করেন, আর তিনি অফিস থেকে ফেরার পর একই কাজ করেন।

শুধু ন্গারাই নন, হারারের রাস্তায় এখন অনেক সরকারি কর্মচারীকে দেখা যায়, যারা দিনের বেলায় সরকারি চাকরি করেন, আর রাতের বেলা ব্যবসার মাধ্যমে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন।

শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন এই কাজে যুক্ত হচ্ছেন।

জিম্বাবুয়ের প্রোগ্রেসিভ টিচার্স ইউনিয়নের সভাপতি তাকভাফিরা ঝাউ বলেন, “বেতন এত কম যে পরিবার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সরকারি কর্মচারীরা এখন বাঁচার উপায় খুঁজছেন।

ঝাউয়ের মতে, “অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী” এখন কোনো না কোনোভাবে ব্যবসা করছেন। যদিও এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।

জিম্বাবুয়ের সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থা, জিমস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) অনানুষ্ঠানিক খাতের অবদান ১৮ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে এর ভাগ ২০ শতাংশ।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার এই সংখ্যাগুলো কম করে দেখায়, আর জিম্বাবুয়ের অধিকাংশ মানুষই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।

এদিকে, রাস্তার পাশে দোকান বসানো নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

হারারের একটি সুপার মার্কেটের ব্যবস্থাপক ট্রাইমোর চিরোজভা জানান, আগে যেখানে বিক্রেতারা শুধু ফল ও সবজি বিক্রি করতেন, এখন তারা মিনি-স্টোরের মতো ব্যবসা করছেন, যা তাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে।

অর্থনীতিবিদ প্যাশেন্স মাওডজা মনে করেন, বিক্রেতারা সরকারি বিধিনিষেধের সুযোগ নিচ্ছেন।

তার মতে, সরকার দোকানগুলোর ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, কিন্তু বিক্রেতাদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ন্ত্রণ নেই, যা নিবন্ধিত ব্যবসায়ীদের জন্য একটি অসম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করছে।

গত এক বছরে জিম্বাবুয়ের অনেক বড় দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।

এর প্রধান কারণ হিসেবে ডলারের ব্যবহার সীমিত করা এবং রাস্তার ব্যবসায়ীদের আধিক্যকে দায়ী করা হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের নীতি ব্যবসায়ীদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বাজারের চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এর ফলস্বরূপ, সরকারি কর্মচারীরাও তাদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই ব্যবসায় নামছেন।

পোর্টশিয়া ম্বানো নামের ৩৯ বছর বয়সী এক নারী সরকারি চাকরি ছেড়ে এখন পুরোদমে রাস্তায় ব্যবসা করছেন।

তিনি জানান, “অফিসে সময় নষ্ট করার চেয়ে এই কাজকে আমি এখন পেশা হিসেবে নিয়েছি।

ভেন্ডর্স ইনিশিয়েটিভ ফর সোশ্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক ট্রান্সফরমেশন (ভিআইএসইটি)-এর পরিচালক স্যামুয়েল মাঙ্গোমা বলেন, হারারের কেন্দ্রস্থলে রাস্তার ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেড়েছে, কারণ আনুষ্ঠানিক চাকরির বাজারে সুযোগ কমে গেছে।

ডুমিসানি ন্গারা জানান, পরিবারের ভালো ভবিষ্যতের জন্য তিনি এই কাজ চালিয়ে যেতে চান।

তিনি চান তার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক এবং তাদের একটি বাড়ি হোক।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *