জিম্বাবুয়ের আবর্জনা থেকে জীবিকা: পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক স্ক্র্যাপ মেটাল সংগ্রহকারীরা।
বৃষ্টির দিনগুলোতে ঢাকার আশেপাশে ভাগাড়গুলোতে যাদের আনাগোনা, তাদের কথা মনে পড়ে? জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারে-তেও একই দৃশ্য। সেখানে কয়েক হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য পুরনো লোহা ও ধাতব পদার্থ সংগ্রহ করে।
তারা একদিকে যেমন পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করে, তেমনি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধেও লড়ছে।
হারারের রাস্তায় প্রতিদিন প্রায় ১,০০০ টন বর্জ্য জমা হয়, যার বেশিরভাগই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। শহরের বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরের আশেপাশে, রাস্তার পাশে এইসব আবর্জনা ফেলেন।
এই আবর্জনা ফেলার কারণে একসময়ের পরিচ্ছন্ন এলাকাগুলো দূষিত হয়ে উঠছে। আর এই কঠিন পরিস্থিতিতেই জীবন ধারণের পথ খুঁজে বের করেছেন সেখানকার কিছু মানুষ।
তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ৩৬ বছর বয়সী ইজেকিয়েল মাবিজা। তিনি জানান, ভালো একটা চাকরির খোঁজে দিনের পর দিন ঘুরেছেন, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
তাই এখন পুরনো জিনিসপত্র কুড়িয়ে বিক্রি করাই তার পেশা। প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিন ও আবর্জনার স্তূপ থেকে স্ক্র্যাপ মেটাল সংগ্রহ করেন তিনি।
ভাঙা যন্ত্রপাতি, পুরোনো গাড়ির যন্ত্রাংশ, টিনের ক্যান—এসব কিছু জড়ো করে প্রায় ৬৬ কিলোগ্রাম ওজনের ধাতব পদার্থ সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তার দৈনিক আয় হয় ৮ ডলার।
এই সামান্য আয় দিয়েই তাকে পাঁচ সন্তানের পরিবারের খরচ যোগাতে হয়।
হারারের আশেপাশে কাজ করা স্ক্র্যাপ মেটাল সংগ্রহকারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের জীবন কতটা কঠিন। ভোর হওয়ার আগেই তারা কাজে বের হন।
শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিন, কলকারখানার পরিত্যক্ত স্থান ও রাস্তার পাশে পড়ে থাকা আবর্জনা থেকে লোহা ও অন্যান্য ধাতব পদার্থ খুঁজে বের করেন। এই কাজটি করতে গিয়ে তারা অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েন।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ পুরনো সিরিঞ্জ, ঔষধের প্যাকেট এমনকি পচনশীল পশু-পাখির দেহাবশেষের মতো জিনিসও কুড়িয়ে পান।
জিম্বাবুয়েতে স্ক্র্যাপ মেটালের চাহিদা অনেক। এখানকার কারখানাগুলোতে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ টন স্ক্র্যাপ মেটালের প্রয়োজন হয়, যা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয়।
পরিবেশ সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে অনেক দেশে এখন পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। স্ক্র্যাপ মেটাল এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কারণ, নতুন করে লোহা তৈরির চেয়ে পুরনো লোহা গলিয়ে নতুন জিনিস তৈরি করতে অনেক কম শক্তি খরচ হয়।
স্ক্র্যাপ মেটাল সংগ্রহ করাকে হয়তো অনেকেই ভালো কাজ হিসেবে দেখেন না। কিন্তু এটা এক ধরনের সবুজ কাজ। এই মানুষগুলো সমাজের পরিচ্ছন্নতাকর্মী।
স্ক্র্যাপ মেটাল সংগ্রহকারীরা একদিকে যেমন পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সাহায্য করে, তেমনি তারা কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধেও লড়ছে।
পুরোনো লোহা ব্যবহার করে নতুন জিনিস তৈরি করলে কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
আমাদের দেশেও, বিশেষ করে ঢাকা শহরে, অনেক মানুষ এই ধরনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা একদিকে যেমন শহরের আবর্জনা পরিষ্কার করেন, তেমনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসের জোগান দেন।
জিম্বাবুয়ের এই গল্প আমাদের দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব এবং পরিবেশ সুরক্ষায় সকলের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা মনে করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।