জমি পুনরুদ্ধারের ফল: জিম্বাবুয়ের করুণ পরিণতি, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপদ!

আফ্রিকার দুটি দেশের ভূমি সংস্কার এবং এর প্রতিক্রিয়ার গল্প: জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকার অভিজ্ঞতা

ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পরও কিভাবে কিছু দেশ তাদের অতীতের ভুক্তভোগী হওয়ার ফল ভোগ করছে, সেই সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধ হলো এটি। আফ্রিকার দুটি দেশ – জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কারের চেষ্টা এবং তার ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার একটি তুলনামূলক চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো।

জিম্বাবুয়ের দিকে তাকালে দেখা যায়, দেশটির সরকার একসময় শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের কাছ থেকে জমি পুনরুদ্ধার করে ভূমিহীন স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এর ফলস্বরূপ দেশটির উপর আসে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

এর ফলস্বরূপ, জিম্বাবুয়েকে একসময় শ্বেতাঙ্গ জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে রাজি হতে হয়। এই বিশাল অঙ্কের অর্থ ছিল দেশটির তৎকালীন কোভিড-১৯ মোকাবিলা পরিকল্পনার পাঁচগুণ বেশি।

অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ভূমি সংস্কারের চেষ্টা চলছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর হাতে থাকা জমির পুনর্বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ, কিন্তু তাদের হাতে দেশের ৭২ শতাংশ জমি।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও অনেকে সরব হয়েছে। এখানেও প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির স্বার্থ রক্ষার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখলে, জিম্বাবুয়েতে শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিক শাসকরা স্থানীয় আফ্রিকানদের জমি থেকে বঞ্চিত করে তাদের একটি বিশাল অংশকে অনুর্বর জমিতে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এই অবিচারই স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম কারণ ছিল।

স্বাধীনতা লাভের পর, জিম্বাবুয়ে সরকার ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়, কিন্তু এর ফলস্বরূপ দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যা দেশটির অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির অর্থনীতিতে “ভয়ঙ্কর প্রভাব” পড়েছে এবং মৌলিক অধিকারগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে আসে। তা হলো, উন্নয়নশীল দেশগুলো যখন তাদের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, তখন কেন তাদের এমন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়? জিম্বাবুয়ের অভিজ্ঞতা একটি ‘ফাঁদ’-এর মতো।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ঋণ এবং সহায়তার অভাবে তারা পিছিয়ে পড়ছে।

আফ্রিকার দেশগুলোতে ভূমি সংস্কারের চেষ্টা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি একটি বৃহত্তর বৈশ্বিক সমস্যার অংশ, যেখানে অতীতের অন্যায়গুলো এখনো বিদ্যমান এবং বিভিন্নভাবে প্রভাবশালী দেশগুলি তাদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করে।

টমাস সানকারার একটি উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য, “ঋণ হলো আফ্রিকার পুনর্দখলের একটি কৌশল।”

এই নিবন্ধে জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কারের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি জটিল চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। একইসাথে, এটি উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন জোগায়।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত এই ধরনের ঐতিহাসিক ভুলগুলো স্বীকার করে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব পথে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়া।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *