ট্রাম্পকে খুশি করতে শুল্ক কমাচ্ছে জিম্বাবোয়ে? চাঞ্চল্যকর পদক্ষেপ!

**জিম্বাবুয়ে: শুল্ক কমানো এবং শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করতে চাইছে?**

দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার এবং বিতর্কিত ভূমি সংস্কারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করা।

ধারণা করা হচ্ছে, এই পদক্ষেপগুলো সম্ভবত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।

আফ্রিকার এই দেশটির এমন সিদ্ধান্তের কারণ হলো, গত কয়েক বছরে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। মুদ্রাস্ফীতির কারণে সেখানকার অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, কর্মসংস্থান কমেছে এবং বাজারে বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা চালু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জিম্বাবুয়ে চাচ্ছে, তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো করতে পারে এবং দেশটির কাছ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। জিম্বাবুয়েও এর শিকার হয়েছিল। এমনকি আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে লেসোথোর ওপর সর্বোচ্চ হারে শুল্ক বসানো হয়েছিল।

ট্রাম্প প্রায়ই অভিযোগ করতেন, আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে।

জিম্বাবুয়ে মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ইস্পাত, তামাক এবং চিনি রপ্তানি করে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশটি যন্ত্রপাতি, ঔষধ এবং কৃষিজাত পণ্য আমদানি করে। যদিও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য খুব বেশি নয়, তবে বাণিজ্য ঘাটতি জিম্বাবুয়ের দিকেই।

জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনানগাওয়া সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক তুলে নেওয়া হবে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, “ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি ইতিবাচক সম্পর্ক” গড়ে তোলা।

তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিম্বাবুয়ের এই পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতির জন্য ভালো নাও হতে পারে। তাদের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্য জিম্বাবুয়েতে সয়লাব হয়ে যাবে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। এর ফলে উৎপাদন কমতে পারে, বাড়তে পারে বেকারত্ব।

এছাড়াও, জিম্বাবুয়ের এই সিদ্ধান্তের কারণে দেশটির প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। কারণ, তারা হয়তো চাইবে, তাদের পণ্যের ওপর থেকেও শুল্ক তুলে নেওয়া হোক।

অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করেছে। যদিও সরকার সরাসরি বলেনি যে, এটি ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার কারণে করা হচ্ছে, তবে অনেকে মনে করছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

জিম্বাবুয়েতে একসময় শ্বেতাঙ্গদের জমির বড় অংশ ছিল। কিন্তু ভূমি সংস্কারের মাধ্যমে সেই জমি স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। যদিও এর ফলে কৃষকদের মধ্যে জমির মালিকানা বেড়েছে, তবে অর্থনীতির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুল্ক কমানো এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলো সম্ভবত জিম্বাবুয়ের ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার স্বার্থ রক্ষা করতে সহায়ক হবে। কারণ, এর মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করে নিজেদের লাভবান করতে চাইছে।

তবে, ক্ষতিপূরণ নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অনেকে বলছেন, সরকার যে পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে, তা তাদের ক্ষতির তুলনায় খুবই সামান্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জিম্বাবুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমনানগাওয়া তাঁর দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গেও লড়ছেন। এমন পরিস্থিতিতে, ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টা তাঁর রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *