নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক সোস্যালিস্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জোহরান মামদানি। সম্প্রতি কুইন্সে জুনটিন্থ উৎসবে তাকে ঘিরে ধরেন অসংখ্য অনুরাগী, যারা তার সঙ্গে সেলফি তুলতে চাচ্ছিলেন।
৩৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন, বিশেষ করে ভাইরাল ভিডিও এবং বিভিন্ন প্রস্তাবের মাধ্যমে। সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর সঙ্গে তার রাজনৈতিক মতানৈক্য রয়েছে।
কুমো আবার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, মামদানির রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বামপন্থী এবং রিপাবলিকানরা এর সুযোগ নিতে পারে।
ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে তার মন্তব্যেরও অনেকে সমালোচনা করেছেন।
মামদানি বর্তমানে নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি ম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি কুইন্সের একটি অংশ প্রতিনিধিত্ব করেন, যা জাতিগতভাবে খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি এলাকা।
তিনি উগান্ডা থেকে আসা একজন অভিবাসী, যিনি প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে এবং পরে নিউ ইয়র্ক সিটিতে বেড়ে ওঠেন। তিনি ব্রঙ্কস হাই স্কুল অফ সায়েন্স-এর মতো নামকরা স্কুলে পড়াশোনা করেছেন এবং বোডইন কলেজেও গিয়েছেন।
তার বাবা কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং মা ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার।
মেয়র নির্বাচিত হলে মামদানি হবেন এই শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়রদের একজন। একইসঙ্গে তিনি হবেন প্রথম মুসলিম মেয়র।
নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রায় ৫ লাখের বেশি মুসলিম বসবাস করেন এবং এখানে ইসরাইলের বাইরে সবচেয়ে বেশি ইহুদি সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন।
মামদানির নীতি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ভাড়া স্থিতিশীল অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখ মানুষের ভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ করা, বিনামূল্যে সিটি বাস পরিষেবা চালু করা, সর্বজনীন চাইল্ড কেয়ার এবং সিটি-সাবসিডাইজড মুদি দোকান স্থাপন করা।
তিনি জানিয়েছেন, শহরের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের উপর কর বাড়িয়ে তিনি এসব প্রস্তাবের খরচ জোগাড় করবেন। তবে এই বিষয়ে রাজ্যের গভর্নর ক্যাথি হোকুল ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মামদানি হাজার হাজার ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের একটি বিশাল বাহিনী তৈরি করেছেন।
কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ, ভারমন্ট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এবং ইউনাইটেড অটো ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন তাকে সমর্থন জুগিয়েছে।
অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক দলের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হলো, থার্ড ওয়ে নামক একটি থিংক ট্যাংক সতর্ক করেছে যে মামদানির জয় ট্রাম্পিজমকে পরাজিত করার লড়াইয়ে মারাত্মক আঘাত হানবে।
প্রাক্তন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোও মনে করেন, মামদানি অনভিজ্ঞ এবং তার ধারণাগুলো অবাস্তব।
মামদানির বিরুদ্ধে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ইসরাইলি সরকারকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
তিনি “বৈশ্বিক ইন্তিফাদা” স্লোগানের ব্যবহারকে সমর্থন করেছেন, যা ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে একটি সমাবেশের ডাক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যদিও, তিনি বলেছেন যে এই স্লোগানটি ছিল “ফিলিস্তিনি মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো এবং সমতার আকাঙ্ক্ষা”।
মামদানির প্রচার দল শহরের ঘৃণা-বিরোধী অপরাধ প্রোগ্রাম ৮০০% বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, তার মন্তব্যের জন্য সমালোচিতও হয়েছেন তিনি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন